November 17, 2024

জেনে নিন অযোধ্যার রাম মন্দিরের ইতিহাস। – Ayodhya Ram Mandir

Ayodhya Ram Mandir

জেনে নিন অযোধ্যার রাম মন্দিরের ইতিহাস। Ayodhya Ram Mandir

দেশ জুড়ে এখন উৎসবেরই মরশুম। আগামী ২২ জানুয়ারি, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই ফের দেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হবে রাম-রাজত্ব!

আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর আগে, বিখ্যাত স্থপতিবীদ চন্দ্রকান্ত সোমপুরা,  নিজের কল্পনায় চিত্রিত করেছিলেন রাম মন্দির।

বলা বাহুল্য, তাঁর সেই মস্তিষ্কপ্রসূত রাম মন্দিরের নকশাই হয়ে উঠেছে, আজকের অযোধ্যার রাম-মন্দিরের ভিত। তবে সোমপুরা যখন নকশাটি তৈরি করেন,  সেই সময় মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনাও ছিল না। ফলে, চন্দ্রকান্তের সেই কল্পনাপ্রসূত রাম মন্দিরের চিত্রটিজ বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগল প্রায় তিন দশক।

Ayodhya Ram Mandir

শুনলে অবাক হবেন বন্ধুরা, অযোধ্যার নব নির্মিত রাম মন্দিরটি তৈরি করতে প্রয়োজন পড়েনি এক কণা ইস্পাতের। বরং দু টন ওজনের গ্রানাইট পাথর, তামা, এবং সাদা সিমেন্টের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে এই দেবালয়টি। রাম মন্দির নির্মাণ করার জন্য, প্রায় দু হাজারটিরও বেশি গ্রাম থেকে মাটি আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ঝাঁসি, চিতরগড়, এমনকী পাঞ্জাবীদের পবিত্র স্বর্ণ মন্দিরও।

ভগবান শ্রী রামের এই মন্দিরটি যে বিশেষ কৌশলে নির্মিত হবে, তা আর বলতে বাকি থাকে না। মন্দিরটির কাঠামো এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যা আগামী এক হাজার বছরেও মেরামত করতে লাগবে না। ভূমিকম্প বা বড় ঝড়ের মত যেকোনও দুর্যোগই আছড়ে পড়ুক না কেন অযোধ্যার বুকে, ভগবান শ্রী রাম তাঁর এই দেবভূমিকে রাখবেন একেবারে অক্ষত।

 

বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস – History Of The Durga Puja Festival

 

 রাম মন্দিরে, স্বয়ং রঘুপতির মূর্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন কর্মকর্তারা। করতে হয়েছে বিশেষ কসরত। দেশের নামী ভাস্করদের মাঝে, যেকোনও একজন ভাস্করের নির্মিত রাম মূর্তিকে বেছে নেওয়া, মোটেই মুখের কথা ছিল না।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেরার মুকুট ওঠে শিল্পী অরুণ যোগীরাজের মাথায়। তাঁর তৈরি ৫১ ইঞ্চি রামলালার মূর্তিটিই স্থান পেয়েছে এই পবিত্র রাম ভূমিতে। যেহেতু অযোধ্যা ভগবান শ্রী রামের জন্মভূমি, তাই শ্রী রানের বাল্য রূপকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এখানে।

Ayodhya Ram Mandir

অরুণ যোগিরাজের তৈরি রামলালার মূর্তিটি দেখলেই যেকোনও ভক্তের মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। মূর্তিটির চোখ নির্মিত হয়েছে পদ্মফুলের পাপড়ির আদলে। সঙ্গে, রামলালার মুখে স্মিত হাসির স্নিগ্ধতা, আপনার মন এক অনাবিল সুখে ভরিয়ে তুলবে।

প্রায় সত্তর একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছে ১২৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট রাম মন্দিরটি।  মন্দিরটি চওড়ায় ২৬৮ ফুট, এবং প্রস্থে ১৪০ ফুট।

বিশেষ ভাবে নির্মিত মন্দিরের সুরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও বেশ কড়া হয়েছে প্রশাসন! সত্যপ্রকাশ শর্মা তৈরি করেছেন এই মন্দিরের তালা। স্বাভাবিক ভাবেই সেই তালা একেবারেই যে সে তালা নয়।

উত্তরপ্রদেশের “তালা নগরী” আলীগড়ের একজন রাম ভক্ত কারিগর হলেন সত্যপ্রকাশ। প্রভুর সুরক্ষার জন্য তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন তালা নির্মাণের। তৈরি করেছেন ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট, ৪০০ কেজি ওজনের একটি তালা। যেটি চওড়ায় ৪.৫ ফুট এবং পুরু ৯.৫ ফুট। যেমন তালা, তেমন তার চাবিটিকেও হতে হবে যোগ্য! দশ ফুট তালার জন্য প্রায় চার ফুট দীর্ঘ চাবি নির্মাণ করেছেন এই রামভক্ত।

অযোধ্যার রাম মন্দিরটি ত্রিস্তরীয়, অর্থাৎ তিনটি তলায় বিভক্ত। প্রথম তলাটিতে শিল্পীর নিপুণ কারুকার্যে ফুটে উঠেছে, বালক শ্রী রামের শৈশব।

সত্তর একর জমির উপর নির্মিত এই মন্দির চত্বর জুড়ে থাকবে আরও সাতটি ছোট মন্দির। মহর্ষি বাল্মীকি, নিষাদ, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অগস্ত্য, শবরী মাতা এবং দেবী অহল্যা অধিষ্ঠান করবেন এই ছোট মন্দিরগুলিতে । ছোট মন্দির ছাড়াও সমগ্র মন্দিরের প্রায় ৭০ শতাংশ স্থান জুড়ে থাকবে প্রাচীন থেকে আধুনিক সময়ের বিভিন্ন প্রকার গাছের সমাহার। এমনকী, এই রাম-রাজত্বে স্থান পাবে একশো বছরের পুরনো বৃক্ষও।

এই মন্দিরটির অন্যতম আকর্ষণ  “টাইম ক্যাপসুল” এর কথা ভুলে গেলে চলবে না। মন্দির থেকে প্রায় দু হাজার ফুট নিচে,  মাটির ভেতরেই এক তামার পাত্রের মধ্যে সংরক্ষিত আছে, রাম মন্দিরসহ সকল তথ্য।

এত বিশেষত্বের মাঝেও বাঙালিদের জন্যও রয়েছে এক সুখবর। চন্দননগরের আলোকসজ্জায় সেজে উঠবে অযোধ্যা ভূমিও। প্রায় দেড়শো জন হুগলীর আলোকশিল্পীর ছোঁয়া পাবে রাম-ভূমি। সুতরাং দেশ জুড়ে এই উৎসবে যে দেশের প্রতিটি মানুষের ভূমিকা রয়েছে, সেই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।

 

Facebook Comments Box
BengaliEnglishHindi