• ব্লকচেইন (Blockchain) কি ?
আপনি হয়তো ব্লকচেইন (Blockchain), ডিজিটাল কারেন্সি বা বিটকয়েনের (Bitcoin) নাম শুনে থাকবেন । আপনি হয়তো ভাবছেন এগুলো কি ? বা এগুলো আমাদের কি কাজে লাগতে পারে ? আজ আপনাকে আমি সহজ ভাষায় এই সব কটি প্রশ্নের উত্তর দেবো ।
আপনি হয়তো ইন্টারনেট(Internet), ফেসবুক(facebook), হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp), ফোন পে(PhonePe), গুগোল পে (GooglePe) সবকিছু ব্যবহার করেন । আর এই গুলি আমরা ব্যবহার করি সাধারণত কিছু তথ্য বা টাকা পয়সা দেওয়ার জন্য । পৃথিবীতে যে যেকোন প্রান্তে থাকুক না কেন আমরা তাঁর কাছে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে খুব সহজেই কোনো তথ্য বা টাকা-পয়সার লেনদেন করতে পারি ।
কিন্তু আমাদের কাছে এইসব তথ্য বা টাকা-পয়সার লেনদেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমরা চাইবোনা এর সবকিছু অন্য কেউ জানুক । কিন্তু আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন আমরা যে সমস্ত সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের (App) মাধ্যমে কোন তথ্য পাঠায় বা টাকা পয়সার লেনদেন করি এই সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশনের (App) কোনো না কোনো কোম্পানির দ্বারা পরিচালিত বা কোন কোন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। আর কম্পানি সেই সমস্ত তথ্য তার নিজস্ব ডাটাবেস এ (Database) সংরক্ষন করে রাখে, সেই কোম্পানি চাইলেই আপনার সমস্ত তথ্য দেখতে পারবে বা চাইলে সে আপনার তথ্য পরিবর্তন বা নষ্ট করতে পারবে।
এখন হয়তো আপনি ভাবছেন আপনার তাহলে কি করা উচিত???
এখন আপনার এমন একটি সিস্টেমের প্রয়োজন যার মাধ্যমে আপনি যেকোন ধরনের তথ্য বা টাকা-পয়সার লেনদেন করলে তা অন্য কেউ জানতে পারবে না এবং সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
আরে এই সিস্টেমটিকে বলা হয় ব্লক চেন (Blockchain)। তাহলে আমরা ব্লকচেইন (Blockchain) কে বলতেই পারি এক নতুন ধরনের ইন্টারনেট।
“ব্লক” এবং “চেইন” এই দুটি শব্দ নিয়েই তৈরি হয় ব্লকচেইন(Blockchain)। চেইন মানে আমরা সবাই জানি শিকল বা একটার সাথে অন্যটি জোরা দেওয়া কোনো কিছু। আর ব্লক মানে বক্স বা এমন কিছু। তাহলে এখন আমরা বলতেই পারি ব্লকচেইন মানে একটার সাথে অন্যটির জোড়া দেওয়া বক্স। যেখানে একটি ব্লক এর সাথে অন্য একটি ব্লক জোরা দিয়ে একটি চেইন বা শিকল তৈরি করা হয়। আর এই ব্লকগুলোর মধ্যে থাকে কিছু তথ্য বা ইনফরমেশন। প্রতিটি ব্লক এর ইনফরমেশন তার পূর্ববর্তী ব্লক এর সাথে সম্পর্কিত থাকে।
• ব্লকচেইন (Blockchain) এর ইতিহাস
ক্রিপ্টোগ্রাফিক টেকনোলজি ব্যবহার করে ব্লকচেইন(Blockchain) নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ করা হয় ১৯৯১ সালের দিকে, যদিও তা সফলতার মুখ দেখতে না পাওয়ার ফলে তার ব্যবহার বিস্তার লাভ করতে পারেনি। এর প্রকৃত ব্যবহারকে কাজে লাগান ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে এক পরিচয় বিহীন ব্যক্তি। যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের (Bitcoin) লেনদেনের জন্য ব্লকচেইন টেকনোলজির(Blockchain Technology) ব্যবহার শুরু করেন । বর্তমানে যার ফলে ব্লকচেইন এর ব্যবহার সম্পর্কে আজ বিশ্বব্যাপি সচেতনতা বাড়তেই আছে। যেহেতু ব্লকচেইন এর যাত্রা সফলভাবে শুরু হয়েছে বিটকয়েন ব্যবহারের মাধ্যমে, তাই সহজেই ব্লকচেইনকে বুঝতে হলে বিটকয়েন (Bitcoin) কিভাবে ট্রান্জেকশন হয় তা দেখা গেলে বিষয়টি সহজে বুঝা যায়।
• ব্লকচেইন (Blockchain) কিভাবে কাজ করে?
সহজ ভাষায় ব্লকচেইন হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড ওপেন লেজার। আরেকটু সহজ ভাষায় বলি। আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন অফিস-আদালতে একটি বড় খাতা থাকে যাতে বিভিন্ন তথ্যাদি লিপিব্ধ করা হয়। এই খাতাকে বলা হয় লেজার। যা শুধু সেই অফিসের স্টাফ ব্যতিত কেউ দেখতে পারে না। ঠিক ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করা হয় তা চেইন স্টিমে একটি লেজারে স্টোর হয়ে যায়। যা সকলে দেখতে পারে। মনেকরেন, আমি কোন ব্যক্তিকে ব্লকচেইনের মাধ্যমে কোন তথ্য বা সহজে বুঝতে গেলে বিটকয়েন পাঠাবো। তহলে আমি যখন সেই ব্যক্তির ঠিকানাই পাঠাবো তখন আমার সেই ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে নেওয়া হবে। এরপর সেই ব্লকটিকে সিকিউরিটি পারপাসে একটি (#) হ্যাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর এক একটি ব্লক অপরটির সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি ব্লকে তার পূর্বের ব্লকের এ্যড্রেস থাকে এইভাবে একটি ব্লককে আরেকটি ব্লকের সাথে সংযুক্ত করা হয়। অপরদিকে একই সময়ে যত ট্রান্জেকশন হয় তার সকল ট্রান্জেকশনকে একটি ব্লকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর যেই ব্লক সবথেকে প্রথমে তৈরি করা হয় এবং যেই ব্লকের মধ্যে অন্য কোনো ব্লকের হ্যাস জমা হয় তাকে বলা হয় জেনেসিস ব্লক।
আর এই কারনেই আমরা চাইলেই যেকোনো সময় যেকোনো ব্লকের হিস্ট্রি দেখতে পারি। কোন ব্লকে কি হচ্ছে তা দেখতে পারি। যার কারনে সব ব্লক অনেক বেশি নিরাপদ থাকে এবং কেউ চাইলেই কোনো ব্লকের তথ্য পরিবর্তন করতে পারে না। কারন একটি ব্লকের তথ্য যদি পরিবর্তন করে তাহলে সেই ব্লকের হ্যাস পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেই ব্লক এর হ্যাস এর সাথে যেহেতু তার পরবর্তী ব্লক এর হ্যাস এর সাথে যুক্ত। তাই সেই ব্লকের পরবর্তী ব্লকের হ্যাস ও পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবং এইভাবে সেই ব্লকের এর পরের সবগুলো ব্লকের তথ্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাই কোনো ব্লকের তথ্য চাইলেই কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।
যার জন্য হাজার হাজার কম্পিউটার কাজ করে। এবং সকল কম্পিউটারে সেই ব্লকটির একটি করে কপি থাকে। এই ভাবেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বা চেইনের সৃষ্টি হয়। আর চেইনের মাধ্যমে যে নতিপত্র ভবিষতরে জন্য জমা হয় এটিকেই লেজার বলা হয়।
ব্লকচেইন হচ্ছে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর প্রযুক্তি।
• ব্লকচেইনের (Blockchain) সুবিধা
ব্লকচেইন এমন একটি টেকনোলজি যা খুবই নিরাপদ এবং দ্রুতগামী। নিরাপদ এই কারনে যে, আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রান্জেকশন করবেন তা হ্যাক করে এর মাঝে গড়মিল তৈরি করা অসম্ভব। মনে করেন আপনি ব্লকচেইন ব্যবহার করে কাউকে কোন পেমেন্ট করলেন, তখন সাথে সাথেই আপনার এই তথ্যটি এই সিষ্টেমের সাথে জড়িত সকল কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর তথ্যটিকে ভ্যলিডিটি দেওয়ার জন্য আপনার ট্রান্জেকশনের সাথে পুর্বের ট্রান্জেকশনের হ্যাস যোগ হয়ে যাবে। এইভাবে আপনার ট্রান্জেকশনের হ্যাসটি পরবর্তী ট্রান্জেকশনের হ্যাসের পূর্ব হ্যাস হিসেবে লিংক হয়ে যাবে। এই ভাবে চেইন সিষ্টেম চলতেই থাকে।
যদি কেউ ব্লকচেইন টেকনোলজিকে হ্যাক করে এর তথ্যের মাঝে কোন গরমিল করতে চাই তবে তা করা অসম্ভব। কারন তা করতে হলে, তাকে একই সময়ে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করতে হবে। কারন আগেই বলেছি প্রতিটি ট্রান্জেকশন তৈরি হওয়া মাত্রই তার তথ্য হাজার হাজার কম্পিউটারে পৌছে যায়। আর ততোধিক ট্রান্জেকশন মিলে একটি ব্লক তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে কমবেশি ১০ মিনিট মত। আর তাই একটি ব্লকের সম্পূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করতে; হ্যাকারের হাতে ১০ মিনিটের কম সময় থাকবে। আর এই সময়েরে মধ্যে হাজার হাজার কম্পিউটার হ্যাক করা কাল্পনিক।