November 21, 2024

Chat GPT কী? এটি কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা অসুবিধাগুলো কী?

chat gpt

এই মুহূর্তে চর্চার শিখরে চ্যাট জিপিটি! কীভাবে বিশ্বের আপামর জনগোষ্ঠীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই চ্যাটবট?

মনে পড়ে সোফিয়ার কথা? টেক্সাসের বাসিন্দা ডেভিড হ্যানসন, অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এর আদলে এক যন্ত্রমানবীকে প্রতিষ্ঠা করেন সমাজের বুকে। সাল তখন ২০১৭। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এই যন্ত্রমানবীটির নাম হয় সোফিয়া। লৌকিক জগতের সকল প্রশ্নের যাবতীয় উত্তর দেওয়ার সঙ্গে, মানুষের মতই মুখমণ্ডলের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে বিজ্ঞানের এই অন্যতম বিস্ময় আবিষ্কারটি। যে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা, সোফিয়ার বিশেষত্ব ছিল, তাকেই প্রয়োগ করে ঘটে চলেছে প্রযুক্তির একের পর এক অগ্রগতি।

জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইন্ড ট্রান্সফরমার, ওরফে জিপিটি হল এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্র। এই জিটিপিই ধারণ করে, কৃত্রিম বু্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। সোফিয়ার শুধুমাত্র একটি যন্ত্র থেকে যন্ত্রমানবী হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে স্বয়ং এই জিটিপির অবদান। সেই জিটিপিকেই বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে সফরসঙ্গী করে এগিয়ে চলেছেন প্রযুক্তিবিদরা। সম্প্রতি তাঁরা একটি নতুন অ্যাপ, অর্থাৎ একটি চ্যাটবট প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে চ্যাটবটের নাম, চ্যাট জিটিপি। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই চ্যাটবট কথোপকথন কেন্দ্রিক। অর্থাৎ, কথার মাধ্যমে চ্যাটবট ব্যবহারকারীর প্রশ্ন শুনলেই, সে বিষয়ে যাবতীয় সকল প্রকার তথ্য প্রদান করতে সক্ষম এই প্রযুক্তি।


চ্যাট জিটিপি নামের এই কথোপকথনমূলক মডেলটি, এক প্রকার AI অর্থাৎ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মডেল। ওপেন AI দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে বিজ্ঞানের এই চমৎকারটিকে।
চ্যাট জিপিটির আগেও, ওপেন আই মডেল হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল Dall- E নামের এক এপ্লিকেশন। এটি ছিল এক প্রকার ইমেজ জেনারেটর। মূলত, লেখা অর্থাৎ টেক্সট থেকে ছবি তৈরি করতে সাহায্য করত এই এপ্লিকেশনটি।

আসুন, প্রথমে জেনে নেওয়া যাক এই চ্যাট জিপিটি চ্যাটবটের সুবিধাগুলি কী কী…

প্রযুক্ত প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে চ্যাট জিটিপি নির্ভুল এবং বেশ যুক্তিযুক্ত উত্তর প্রদান করে। যার ফলে ব্যবহারকারীর বিশেষ সুবিধা হয়। এমনকি এই চ্যাটবট কবিতা লিখে দেওয়া থেকে শুরু করে, পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরে সাহায্য করা, প্রজেক্ট বা এসাইনমেন্ট করা, অথবা, অর্থনীতি থেকে রসায়ন যাবতীয় সকল বিষয় সম্পর্কে আপনাকে তথ্য প্রদান করতে সক্ষম।

এবার আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, এত বড় বিস্ময়টি কিভাবে ঘটাচ্ছে এই প্রযুক্তিটি? সেই প্রশ্নের উত্তরও রইল আপনাদের জন্য।


এই ওপেন AI চ্যাটবট ইন্টারনেটে উপলব্ধ টেক্সট ডাটাবেসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ লাভ করে। ইন্টারনেটের অন্তর্গত যেকোনও উইকিপিডিয়া, ওয়েব টেক্সট, ওয়েব পেজ, পিডিএফ, আর্টিকেলসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ৫৭০ জিবির বেশি ডাটাকে ধারণ করতে পারে এই AI মডেলটি। আরও বিস্ময়ের, এই অ্যাপটিতে রয়েছে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন শব্দের ভান্ডার। পাশাপাশি এটি একটি বাক্যের পরবর্তী শব্দটি কী হতে পারে, সেটিও ভালই ‘প্রেডিক্ট’ করতে দক্ষ।

ব্লকচেইন কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে ?


চ্যাট জিপিটির আবির্ভাব নিয়ে, আপামর বিশ্ব সরগরম হয়ে উঠেছে গত নভেম্বর থেকে। চ্যাট জিটিপির অত্যাধুনিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের গুণটিই মূলত চর্চার কেন্দ্রে। আদতে এই অত্যাধুনিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতিটি, গুণ হিসেবে আপাত দৃষ্টিতে বিবেচ্য হলেও, এটিই কিন্তু বহু সাধারণ মানুষের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করার কারণ। বিশ্বের এক দল বিশেষজ্ঞের মতে, চ্যাট জিপিটির দক্ষতা এতই প্রবল, যে এটি জিরে থেকে হীরের মত পৃথিবীর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় থেকে গুরুতর বিষয়ে সম্পর্কে জ্ঞান ধারণ করতে পারে। এর ফলে ব্যবহারকারীর জ্ঞান আহরণ তো সত্যিই খুব সহজ ভাবেই হয়ে যায়, কিন্তু ব্যবহারকারী তাঁর এই দুর্বলতার সুযোগও নিয়ে নেন। ফলে তিনি অলস হয়ে ওঠেন। এমনকি ব্যাহত হতে পারে তাঁর স্বাভাবিক সৃজনশীলতা বা বুদ্ধির বিকাশ। তাই শিশুদের জন্যও ভয় পাচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। ইদানিং কালে অনেক শিশুরই পড়াশুনা-বিমুখ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এর একটি প্রধান কারণ, হাতে থাকা মুঠো ফোনের প্রভাব। তাই চ্যাট জিটিপি, ফোনে থাকার ফলে শিশুদের বিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে এক নিমেষে। কিন্তু শিশুর মানসিক বিকাশ কতখানি উন্নত হবে, সেই নিয়ে বড় জিজ্ঞাসা চিহ্ন সৃষ্টি হয়েছে গবেষকদের মতে।

দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কনটেন্ট রাইটার অথবা ব্লগার-গোষ্ঠীও। অনেকেই আছেন যাঁরা একাধিক কাজ সামলে, তারপর সময় সুযোগ বুঝে লেখালেখি করতে ব্রতী হন। কেউ করেন নেশায়, কেউ বা করেন পেশায়। মানুষের স্বাভাবিক সৃজনশীলতা প্রসূত লেখাকেও, কখনও গুণগত মানের দিক দিয়ে ছাপিয়ে যায় চ্যাট জিটিপি। তাই অনেকেই এটির সাহায্য নিয়ে লিখে থাকেন। এমনও হতে পারে, নিজস্ব মননশীলতা প্রসূত কিছু লিখে, পেশাগত কনটেন্ট রাইটাররা পিছিয়ে পড়েন চ্যাট জিটিপি ব্যবহারকারীদের কাছে। তাঁরা এই চ্যাটবট ব্যবহার করার ফলে, আরও গুণমান এবং তথ্য সমৃদ্ধ লেখার অধিকারী হন। ফলে এই কারণেই চিন্তার মেঘ ঢেকেছে ব্লগার বা কনটেন্ট রাইটারদের আগামীর আকাশে।

চ্যাট জিটিপি হয়ত সত্যি এই প্রজন্মকে অলস করে তুলছে, কিন্তু তবুও যন্ত্রের যন্ত্র হওয়া থেকে মানবজাতিকে দমিয়ে রাখতে পারে এই চ্যাটবটের কিছু সীমাবদ্ধতা।
প্রথমেই বলা যায়, এই চ্যাটবটের তথ্য প্রদান নিরপেক্ষ নয়। কারণ এটি সেই প্রদেয় ডেটা এবং তথ্যের উপর নির্ভরশীল, যার উপর এটি প্রশিক্ষিত হয়েছে, সেটির বিরোধীতা কখনই করবে না এই অ্যাপ। আবার, এর বিষয়বস্তু সর্বদা সম্পূর্ণরূপে সঠিক বা আপ-টু-ডেট নাও হতে পারে। আপ টু ডেট না হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যায়, এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞানকে ধারণ করে, সময়ের অগ্রগতিতে এটির তথ্য ধারণে পরিবর্তন আসে না। ফলে এই অ্যাপের বুদ্ধিমত্তা কালজয়ী হতে পারে না। এছাড়া বানানের দিক দিয়ে বা ব্যাকরণের দিক দিয়ে তো যান্ত্রিক ত্রুটি থাকেই।


তাই, পরিশেষে বলাই যায়, এটিকে গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হলেও, যে যার নিজের দিক দিয়ে স্বতন্ত্র্য এবং প্রতিষ্ঠিত। গুণের দিক দিয়ে নিঃসন্দেহে চ্যাট জিপিটি উন্নত, তার মানে এই নয় যে গুগলের আধিপত্য শেষ হওয়ার। আর মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে এই যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা তা একেবারেই হয় না। অনেক বিদ্যালয়ে এই অ্যাপের প্রচলন বেড়ে যাচ্ছিল বলে তাৎক্ষণিক ভাবে সেই ব্যবহার স্তিমিত করা হয়। ফলে আবার শিশুরা পুরনো ছন্দে অর্থাৎ নিজস্ব বোধবুদ্ধির সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার পথেই অগ্রসর হয়েছে।


যতই হোক, কৃত্রিম এবং স্বাভাবিকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছেই। মানুষের সৃজনশীলতাকে কখনও টেক্কা দিতে পারবে না এই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এক্ষেত্রেও যন্ত্রের আগে, মানবতার জয়েই সাধিত হবে।

Facebook Comments Box
BengaliEnglishHindi