কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ – Cheapest Foreign Trip From India
সামনেই পুজো, বড়দিন, এই করে দেখতে দেখতে নতুন বছরও এসে যাবে। তা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি হিসেবে আপনার সফরনামাতেও যদি একটু নতুনত্ব যোগ হয়, কেমন হবে বলুন তো?ঘুরতে ভালোবাসেন, অথচ এদিকে দেশের প্রায় অনেক জায়গা ঘুরে এখন মন চেয়েছে বিদেশের মাটি ছুঁতে, কিন্তু বাধ সাধছে পকেট?
আর কোনও চিন্তা নেই। আমরা তাই চলে এসেছি আজকের এই বিশেষ পর্ব নিয়ে, যেখানে আপনাদের জন্য থাকল এমন কিছু বিদেশ সফরের হদিশ, যা আপনার বাজেটের মধ্যেই দারুন ভাবে সম্পন্ন করা যাবে। তবে চলুন, আর দেরি না করে সেই বিদেশ সফরে ঢু মারা যাক।
সিঙ্গাপুর – বিদেশ যাত্রা বলতেই যে কটা গতে বাঁধা নাম প্রথমে মাথায় আসবেই, তার মধ্যে একটি হল অবশ্যই সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি, পরিভ্রমণ করতে আপনার পকেট মোটেই বিশেষ আপত্তি জানাবে না। মালয় ভাষা Singapura/ সিঙ্গাপুরা থেকে সিঙ্গাপুর শব্দটির উৎপত্তি। যার অর্থ হল সিংহপুর। চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হয়ে উঠেছে এই দেশের প্রাণকেন্দ্র। পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়েও বিশেষভাবে নজর কেড়েছে এই আপনার এই স্বপ্নের দেশটি।
সিঙ্গাপুর আপনি যদি চেন্নাই হয়ে যেতে চান, তবে আপনার বিমানের টিকিট মূল্য প্রায় ছয় হাজারের মধ্যে হয়ে যাবে। তবে যেকোনও নির্বাচিত স্থান যাওয়ার ক্ষেত্রেই, চার পাঁচ মাস আগে থেকে নিয়মিত বিমানের টিকিট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন। কারণ এই মূল্য সিজন বা অফসিজন অনুযায়ী ওঠা নামা করে। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার খরচ আট হাজারের মধ্যেই হয়ে যাবে। তবে আরও কম খরচে বিমান সফর করতে পারলে আপনাকে সাহায্য করবে স্কাইক্যানার।
2 থেকে 3 দিন মত এই স্থানটি প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারেন।
এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে যেতে পারেন মারলাওন পার্ক, যা সিঙ্গাপুরীদের কাছে গর্বের এবং বীরত্বের প্রতীক হিসেবে অবস্থান করে। এছাড়া সমুদ্রের মাঝে বিনোদনের জন্য ছোট্ট একটি দ্বীপ Sentosa Island ও আপনার সফরকে মনোরম করে তুলবে। এছাড়া বার্ড পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির প্রশিক্ষিত পাখিদের কীর্তি কলাপ উপভোগ করা, অথবা বন্য জঙ্গলে নাইট সাফারি হল সিঙ্গাপুরের অন্যতম আকর্ষণ।
এই স্থানগুলি ছাড়াও হাজার বাতীর একটি বৌদ্ধ মন্দির প্রসিদ্ধ সিঙ্গাপুরে। সেখানকার শান্তি স্নিগ্ধ পরিবেশ এবং তাক লাগানো আর্কিটেকচার আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এছাড়া আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ট্যুর, হেলিক্স ব্রিজ, ইস্তানা প্রভৃতি জায়গাগুলিও ভ্রমণের পক্ষে বেশ উপযুক্ত।
সিঙ্গাপুরে রাত্রি নিবাসের জন্য আপনার খরচের মধ্যে থাকতে পারেন ক্যাপসুল হোটেলে। হোটেল খরচের জন্য কমপক্ষে তিন হাজার টাকা মত ব্যয় হতে পারে।
থাইল্যান্ড – বিদেশ যাবেন, অথচ থাই সংস্কৃতির অংশীদার হবেন না, তা হয় না! সিঙ্গাপুরের মতই ভ্রমণপ্রিয় মানুষের আরেকটি ড্রিম ডেস্টিনেশন থাইল্যান্ড। আপনারা শুনলে খুশি হবেন, থাইল্যান্ড সফরও সংঘটিত হতে পারে আপনার বাজেটের মধ্যে। অতীতের শ্যামদেশ অর্থাৎ বর্তমানের থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫, ১৩, ১২০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় সাত কোটি জনজাতি বসবাস করেন এই দেশে।
থাইল্যান্ডের বিমান ভাড়াও সাত হাজারের মধ্যে পেয়ে যাবেন। তবে আকর্ষনীয় ছাড় পাওয়ার জন্য অবশ্যই স্কাইক্যানার নজরে রাখতে হবে।
ফুকেট, ব্যাংকক, পাতায়া, ক্রাবি এমন বেশ কিছু দেশ নিয়ে থাইল্যান্ড গড়ে উঠেছে। পকেট বাধ সাধলে আপনি অনায়াসে এর মধ্যে দুটো কী তিনটে সফর আপনার তালিকাভুক্ত করতে পারেন। তবে ভ্রমণপিপাসু সাধারণ বাঙালিদের চাহিদা হিসেবে যেহেতু ব্যাংকক এবং পাটায়াই সর্বাধিক প্রাধান্য পায়, তাই থাকল সেই নিয়েই দু চার কথা।
ব্যাংকক – ব্যাংকক সম্পর্কে আলাদা করে পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই। স্বপ্নের মত সুন্দর মায়াবী এই দ্বীপটি থাইল্যান্ডের রাজধানী। মধ্য থাইল্যান্ডের চাও ফ্রেয়া নদীর বদ্বীপে ১, ৫৬৮.৭ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই স্বপ্ন নগরী। এখানে স্কাই ট্রেনের সফরে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন গোটা ব্যাংকককে। ব্যাংককে রয়েছে ভ্রমণের জন্য একাধিক রকমের চমক। সরাসরি ভাবে সমুদ্রের তলায় না গিয়েও, সিয়াম প্যারাগনে উপভোগ করতে পারবেন সামুদ্রিক জগৎকে। এছাড়াও গ্র্যান্ড প্যালেসে ইতিহাসের সাক্ষী থাকা থেকে লুমপিনি পার্কে প্রিয় মানুষের সঙ্গে নিরিবিলিতে একান্ত মুহূর্ত যাপন, আপনার ব্যাংকক সফরকে চির স্মরণীয় করে রাখবে। এছাড়া ব্যাংককের জাতীয় জাদুঘর, ভাসমান বাজার, এমকনকী মাদাম তুসো মিউজিয়ামও আপনার ব্যাংকক যাত্রাকে পরিপূর্ণতা দেবে।
•পাটায়া – ব্যাংকক থেকে প্রায় ১৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরও এক থাই স্বপ্ন নগরী পাটায়া। ব্যাংককের মত এখানেই আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড থেকে শুরু করে ভাসমান বাজার বা জাদুঘরের তাক লাগানো বিস্ময়গুলি বর্তমান। এছাড়া বিগ বুদ্ধা হিল, আর্ট ইন প্যারাডাইস, মিনি সিয়াম, জমটিয়ান বিচ প্রভৃতি হল পাটায়ার দর্শনীয় স্থান।
মালদ্বীপ – ভ্রমণপ্রেমী, আবার সামুদ্রিক জগৎ আপনাকে বেশি হাতছানি দেয়! এদিকে মালদ্বীপের মত স্বর্গীয় নৈসর্গিক জগৎ আপনার কাছে স্বপ্নেই আবদ্ধ রয়েছে! এ কেমন যন্ত্রণা বলুন তো? কিন্তু আর মনকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। পকেটে পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় থাকলেই আপনি ছুঁয়ে ফেলতে পারবেন এই মায়ার জগৎকে।
মাত্র পাঁচ হাজারের মধ্যেই পেয়ে যাবেন বিমানের টিকিট। দু চারদিন হাতে সময় নিয়ে সাক্ষী হন সেই মনোরম অপার্থিব সৌন্দর্যের। নীল সাগরের মাঝে রাত্রিবাস থেকে নানা রকম সামুদ্রিক খাদ্যের স্বাদ গ্রহন! সবটা হয়ে উঠবে আপনার মনের মত খরচে। মালদ্বীপে হোটেলগুলির ভাড়া শুরু মাত্র আড়াই হাজার থেকে।
তবে মালদ্বীপে সাধারণ দু রকমের দ্বীপ থাকে। ব্যক্তিগত, এবং সর্ব সাধারণের জন্য। মালদ্বীপ যেহেতু আমাদের জায়গা, তাই তারকাদের পছন্দের হলিডে ডেস্টিনেশন হল মালদ্বীপ। তাঁরা সাধারণত ব্যাক্তিগত দ্বীপেই থাকতে পছন্দ করেন। সেখানে ঘর ভাড়া তিরিশ হাজার থেকে লাখের ঘরে পৌঁছে যায়। বলা বাহুল্য, খাবারের দামও আকাশ ছোঁয়া। সেখানে আপনি যদি সর্ব সাধারণের জন্য দ্বীপে থাকেন, সেখানে অনেক কম খরচে আপনার মালদ্বীপ ভ্রমণ সম্পন্ন হবে। বন্ধুরা, আপনাদের আরও একটি বিষয়ে আশ্বস্ত করি, এই ধরনের বিচে এক প্লেট ফ্রায়েড রাইস দুশো টাকা মত। তাহলে বুঝতেই পারছেন, কম খরচেও স্বপ্ন ছোঁয়া যায়!
মালয়শিয়া – এতগুলি সফরের মধ্য সবচেয়ে কম বিমান খরচে আপনি সুসজ্জিত স্বপ্নের মত সুন্দর মালয়শিয়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন, জানেন কি? মাত্র চার হাজার টাকা বিমান মূল্যের বিনিময়ে আপনি সাক্ষী হতে পারবেন এই সুন্দর সফরের।
চাকচিক্যময় মালয়শিয়ার প্রসিদ্ধ শহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কুয়ালালামপুর, পেনাং, পারহেনশিয়ান দ্বীপ, মালয়েশিয়ান বর্নেও, মালাক্কা, তামান নেগারা।
সবুজ পর্বতমালা এবং নীল জলরাশির মাঝে ভ্রমণপ্রেমী মানুষের প্রাণকেন্দ্র মালয়শিয়ার অবস্থান। মালয়শিয়া নাম শুনলেই আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে টুইন টাওয়ারের কথা। টুইন টাওয়ার অবস্থিত মালয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে। এতদিন ছবিতে বা রেপ্লিকা হিসেবে যাকে দেখেছেন, তাকে সামনে থেকে দেখা আপনার সারা জীবনের একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে মনের মণিকোঠায় স্থান পাবে।
এছাড়া মিরি, লাবুয়ান, রেদ্যাং দ্বীপপুঞ্জ, পারহেশিয়ান আইল্যান্ড, মাউন্ট কিনাবালু উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র
থাকার জন্য আপনি কুয়ালামপুর নির্বাচন করতে পারেন। দু তিন হাজারের মধ্যেই আপনার রাত্রিবাস সম্পন্ন হবে।
তবে বিদেশ সফরের জন্য বেশ কিছু দিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। যেমন প্রথমেই আসে বৈধ ভিসার চিন্তা। আগে ঠিকমত পাসপোর্ট এবং ভিসা তৈরি করিয়ে নিতে হবে বিদেশ যাত্রার জন্য। পাসপোর্ট বা ভিসা না থাকলে আপনি কিন্তু দেশের গন্ডি অতিক্রম করতে পারবেন না।
ভিসা পাসপোর্টের পরের চিন্তা হয় কারেন্সি নিয়ে। দেশীয় অর্থ কিন্তু বিদেশে প্রযুক্ত হবে না। তাই সবার প্রথমে ডলার বা ইউরোতে কারেন্সি কনভার্ট করে নিতে হবে। সব কিছুর ব্যবস্থা আগে করা থাকলে, আপনারই সুবিধা।
বিদেশে ভ্রমন করতে যাওয়ার আগে শিখে নিতে হবে ঠিক মত বার্তালাপ করার জন্য ইংরেজি ভাষা। যদি আরও কিছু স্থানীয় ভাষা শিখে নিতে পারেন তবে সোনায় সোহাগা।
এছাড়া বিভিন্ন রকম অ্যাপ আপনাকে বিদেশে ভ্রমণরত অবস্থায় সুবিধা দেবে। যেমন ট্রিওভিলা, হোটেলবুকর্স, ভেকেশন রেন্টালস, হোমস্টে. ইন, হোটেলস.ইন অ্যাপগুলি আপনার ফোনে থাকলে, থাকার জায়গার সমস্যা হবে না। এছাড়া পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর জন্য অবশ্যই উবের বা Grab এর সাহায্য নিতে পারবেন।
আপনার প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্গে দরকারি ঔষধ পত্র নিতে কিন্তু ভুলবেন না। মনে রাখবেন, এ দেশের চিকিৎসার কিন্তু অন্য দেশের মিল নাও থাকতে পারে। তাই আপনার শরীরের চাহিদা মত ঔষধ সেখানে নাও পেতে পারেন।
প্রিয় দর্শক বন্ধুরা, আজকের বিদেশ সফরনামা এই পর্যন্তই। দেখা হবে আবার পরের ভিডিওয়।