মারত্তিচাল- ভারতের Chess village
আমাদের দেশ ভারতবর্ষে এমন একটি গ্রাম রয়েছে, যে গ্রামে গাছের নীচে, বাজারের কাছে, দোকানের ধারে এমনকি স্কুলেও বেশিরভাগ সময় দাবার আড্ডার আসর বসে এবং এখানকার প্রায় সবাই দাবা খেলায় বেশ পারদর্শী। তবে এখানকার সবাই যে কোন বড় দাবার প্রতিযোগিতার জন্য preparation নিচ্ছে তা কিন্তু নয়, আসলে এখানে দাবা খেলাটা একটা daily routine-এর মধ্যে পড়ে, অনেকটা নেশার মত। আর এই কারনেই এই গ্রামটিকে বলা হয় Chess village। তো আমাদের দেশের যে গ্রামটিতে ৩৬৫ দিন ই মানুষ দাবার চাল চালে সেই গ্রামটির নাম হল মারত্তিচাল। গ্রামটি কেরালার ত্রিসুর district- এ অবস্থিত।
সংক্ষেপে দাবা খেলার ইতিহাস
বলা হয় যে দাবা বা chess খেলাটি ভারতেই শুরু হয়েছিল। ভারতে চতুরঙ্গ নামে এই খেলাটির সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই। এই খেলার চারটি অংশ হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য আর সেই কারনেই এই খেলার নাম ছিল চতুরঙ্গ। পরে আরব শাসক এই খেলাটির নাম দেয় শতরঞ্জ। এবং পরে পারস্য থেকে ইউরোপ হয়ে এই খেলাটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
কীভাবে মারত্তিচাল গ্রামে দাবার নেশা লাগল
Actually এই গ্রামে দাবা খেলা শুরু করেছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা Mr. C উন্নিকৃষ্ণণ । প্রায় ৪০ বছর আগে এই গ্রামে সন্ধ্যে ৭ টার পর কেউ ঘর থেকে বেরত না, transportation এর কোন ব্যবস্থা ছিল না, চারিদিকে জঙ্গল ছিল, smuggling চলত, এবং এখানকার প্রায় সব লোকেরাই লোকাল মদ এবং জুয়ার নেশায় ডুবে থাকত। আর সেই মদ এবং জুয়ার হাত থেকে ১৪ বছর বয়সি উন্নিকৃষ্ণণ এই গ্রামের লোকেদের বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন Chess grandmaster বব ফিসার-এর একনিষ্ঠ ভক্ত। এরপর যুবক বয়সে C উন্নিকৃষ্ণণ গ্রাম ছেড়ে পাশের এক ছোট শহরে বাস করতে থাকেন এবং সেখানে দাবা খেলা শেখেন। ধীরে ধীরে দাবার প্রতি তার ভালবাসা বাড়তে থাকে। এদিকে গ্রাম ছেড়ে চলে আসার পরও তার গ্রামের প্রতি টান এতটুকুও কমে নি। তাই তিনি গ্রামবাসীদের ওই দুরাবস্থার হাত থেকে বাঁচানর জন্য এক মোক্ষম চাল চালেন। তিনি গ্রামে গিয়ে একটি চায়ের স্টল খোলেন এবং তার চায়ের স্টলে গ্রামের যারা যারা চা খেতে আসত তাদের চা খাওয়ানোর সাথে সাথে দাবা খেলার ব্যপারে নানান রকম ধারনা দিতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই গ্রামের কয়েকজন যুবকদের মধ্যে এই খেলার আগ্রহ দেখা দিল। এবং ধীরে ধীরে ১০০ জন থেকে শুরু করে গ্রামের প্রায় সবাই দাবা খেলায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। রাতারাতি পাল্টে যায় এই গ্রামের মানুষদের অভ্যাস। এই গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক player-এর বয়স ৭০ বছর, এবং সবথেকে ছোট player-এর বয়স ৩ বছর। এই গ্রামের একই সময়ে ১০০০ জন মানুষের দাবা খেলার এশিয়ান রেকর্ড রয়েছে।
দাবা খেলার অভ্যাসের পর এই গ্রামের পরিবর্তন
এই গ্রামের লোকেরা বলে যে দাবা খেলার ফলে তাদের personality তে অনেক পরিবর্তন এসেছে, patience level বেড়ে গেছে, decision making power ও improve হয়েছে। শুধু তাই নয় এখানকার স্কুলের সিলেবাসেও দাবা খেলা রয়েছে। এখানকার বাচ্ছাদের ছোট বেলা থেকে দাবা খেলার অভ্যেস করানোর ফলে তাদের পরাশুনাতেও উন্নতি হয়েছে। তারা সহজেই advanced math করতে পারে এবং তাদের critical thinking skills এরও develop হয়েছে। এমনকি এই গ্রামের বাচ্ছারা এখন state ও national championship এর জন্যেও তৈরি হচ্ছে।
এই গ্রামে দাবা খেলার যে craze সেটি ২০১৩ সালের August club নামের একটি মালায়লাম মুভিতেও দেখান হয়েছে। যখন Chess grandmaster, five time chess world champion Viswanathan Anand এই গামটির ব্যপারে জানতে পারেন তিনিও এই গ্রামটিকে অভিনন্দন জানান। একটা সময় যে দেশ সারা বিশ্বকে দাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আজ সেই দেশেরই একটি ছোট গ্রাম মারত্তিচাল এই খেলাকেই নিজেদের passion বানিয়ে নিয়েছে। তাই আমার মনে হয় দাবাতে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আপনাদের কি মনে হয় অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।