October 10, 2025

বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস – History Of The Durga Puja Festival

Durga Pujo

বাঙালির আবেগ, বাঙালির উচ্ছ্বাস, বাঙালির মন খারাপের ওষুধ, বাঙালির প্রাণশক্তি, এই সবকিছুরই মধ্যমণি দুর্গাপুজো। বাঙালি এবং দুর্গাপুজো একে অপরের পরিপূরক। বাঙালি যদি কারুর নাম হয়, তবে দুর্গাপুজো হবে তাঁর পদবী। দুটিই যেন অভিন্ন। আজ এই বিশেষ পর্বে আলোচনা করব, বাঙালির দুর্গা পুজো তথা  বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস নিয়ে।

দুর্গা পুজো নিয়ে নানা মুনির নানা মত। নির্দিষ্ট ভাবে এই পুজোর উৎপত্তি সম্পর্কে সেভাবে জানা যায় না। দুর্গা পুজোর ইতিহাসকে মোটামুটি কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন,

• পৌরাণিক –

‘অকালবোধন’! মূলত শরতকালেই এই পুজো হয়ে থাকে।
এই পুজোকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে এক পৌরাণিক উপাখ্যান। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, কৃত্তিবাস রামায়ণের অনুবাদে এই পুজোর উল্লেখ করেন। শৈব ভক্ত রাবণকে পরাজিত করতে, ব্রহ্মাদেবের পরামর্শে রাম, শিবের স্ত্রী দুর্গার আরাধনায় মত্ত হন। কিন্তু শরৎকাল দেব-আরাধনার সঠিক সময় হিসেবে বিবেচ্য হয় না। তবুও রাম, দেবী দুর্গার বোধন থেকে শুরু করে চণ্ডীপাঠ সমস্তটাই করেন। দেবীর দর্শন না পেয়ে, রাম মহানবমীর পূজার প্রাক্কালে হনুমান কর্তৃক ১০৮ টি পদ্মের আয়োজন করেন দেবীর পূজার জন্য। কিন্তু দেবী রামের ভক্তির পরীক্ষা করতে একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন। রাম সেই পদ্ম খুঁজে না পেয়ে নিজের চোখ উপড়ে নিয়ে দেবীকে পদ্মের পরিবর্তে নিবেদন করতে চান। রামের নিঃস্বার্থ ভক্তি দেখে দেবী প্রসন্ন হয়ে রামকে আশীর্বাদ প্রদান করেন।

Durga Puja 2025 – দুর্গাপুজো ২০২৫ নির্ঘণ্ট: মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত।

 

• ঐতিহাসিক

দুর্গা পুজোর ইতিহাস নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে ইতিহাস বলে, ভারতের আদি দ্রাবিড় সভ্যতায় দ্রাবিড়দের মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক যে সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল, সেখানে দেবীর আরাধনা করা হত। সিন্ধু সভ্যতাতেও দেবী মূর্তির নিদর্শন পাওয়া গেছে। বিশদভাবে এবং নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও ঐতিহাসিকদের অনুমান, হয়ত এই আদি সভ্যতাগুলি দেবী দুর্গাকে স্মরণ করেই তাঁর আরাধনায় নিমজ্জিত ছিলেন।
আবার প্রাচীন সাহিত্যে বিভিন্ন লেখকের লেখনীতে দুর্গা বন্দনা সাধিত হয়েছে। যেমন মধ্যযুগের কবি, বিদ্যাপতির রচিত ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী’তে দেবীর বন্দনা বন্দিত হয়েছে। এমনকি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ কামনায় ১৯৫৭ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ীতে, নবকৃষ্ণদেব দুর্গা পুজোর আয়োজন করেন। লর্ড ক্লাইভও উপস্থিত ছিলেন এই আয়োজনে। এছাড়াও দুর্গা পুজো স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ঠিক স্বাধীনতার পর বাঙালির হৃদয়ের সঙ্গে একেবারে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত হয়ে ওঠেন সকলের আদরের ‘উমা’।

• পারিবারিক

বাঙালি বনেদি পরিবারে বেশ অনেকদিন থেকেই দুর্গা পুজোর প্রচলন ছিল। সঠিক সময় সে সম্পর্কে জানা যায় না। তবে ধনী পরিবারগুলি সংসারের সুখ সমৃদ্ধির জন্য দেবীর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকতেন। খুব আয়োজন করেই করা হত শারদ উৎসব। এই পুজোগুলি ‘বনেদি বাড়ির পুজো’ নামে বাঙালিদের কাছে বিশেষ উন্মাদনার কেন্দ্র ছিল। পুজোর দিনগুলো আনন্দ আয়োজন, জনসমাগমে ভরে উঠত।

প্রথম থেকেই বাঙালির কাছে উমা আসেন একেবারে সপরিবারে। অন্যান্য জাতির কাছে মা দুর্গা কেবল এককভাবেই পূজিত হন। বাঙালির ঘরের মেয়ে উমা, তাঁর সন্তানদের অর্থাৎ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশকে নিয়ে আসেন। এখানে উমা সিংবাহিনী, দুষ্ট অর্থাৎ অসুরকে দমন করে তাঁর শক্তিশালীনি রূপটিও প্রকাশ পায়। সকল নারী শক্তির আধার তিনি। মাতৃস্নেহে উজ্জীবিত থাকলেও, প্রতিরক্ষা করতেও যে তিনি সমানভাবে সক্ষম তারই প্রতীক হয়ে ওঠে দুর্গা পুজো।
আশ্বিন বা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গা পূজা সংঘটিত করা হয়। যদিও শাস্ত্র বা তন্ত্রমতে সকল সময়ই দুর্গাপূজার সময়। এক বছরে মূলত চারটি নবরাত্রি আসে। আবার এই চার নবরাত্রির মধ্যে দুটি গুপ্ত নবরাত্রি হয়ে থাকে। মা দুর্গা এই চারটি নবরাত্রিতেই পুজিত হন। প্রসঙ্গত, আশ্বিনের নবরাত্রি পুজোটিই আমাদের অতি প্রিয়, এবং কাছের শারদীয় পুজো এবং বসন্তের নবরাত্রির দুর্গা পুজোকে বাসন্তী দুর্গাপূজা বলা হয়।

বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাস জানতে পেরে কেমন লাগলো ??

Facebook Comments Box
BengaliEnglishHindi