হাওড়া মেট্রো স্টেশন হতে চলেছে ভারতের গভীরতম ও বৃহত্তম মেট্রো স্টেশন
5 years ago bongcuriosity@gmail.comহাওড়া মেট্রো স্টেশন- Howrah Metro Station
আমাদের গর্বের কলকাতা বারবারই আমাদের গর্বিত করে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত নানান সৃষ্টি ও স্থাপত্যের মধ্যে দিয়ে নিজের ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে বজায় রাখতে কলকাতা অনড়। বহুকাল ধরে তারই মধ্যমণি হাওড়া ব্রিজ। কলকাতা ও হাওড়া কে সংযোগকারী এই ব্রিজ বহুকাল ধরে হাওড়া ও কলকাতার পরিচয় বহন করছে।
তার সাথে তাল মেলায় পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশন হাওড়া স্টেশন।
এরই সাথে কলকাতা ও হাওড়ার গর্বের মুকুটে আরো একটি পালক জুড়তে চলেছে ভারতের গভীরতম মেট্রো স্টেশন এর মাধ্যমে। ঠিকই শুনেছেন হাওড়া রেল স্টেশনের নিচেই তৈরি হতে চলেছে ভারতের গভীরতম ও অন্যতম বৃহৎ মেট্রো স্টেশন হাওড়া মেট্রো স্টেশন। এর পূর্বে দিল্লির হজকাস ছিল গভীরতম মেট্রো স্টেশন, যার গভীরতা ২৯ মিটার।
- হাওড়া মেট্রো স্টেশন
তাকে ছাপিয়ে হাওড়া মেট্রো স্টেশন এর গভীরতা হবে ৩৩ মিটার, যা মুলত কলকাতা হাওড়া কে সংযোগ করবে। যার একদিকে থাকবে হাওড়া ময়দান ও অন্যদিকে এটি সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত যাবে। এই east-west কলকাতা মেট্রোর key স্টেশন হবে হাওড়া মেট্রো স্টেশন। কারন হাওড়া ও শিয়ালদা রেল স্টেশন কে যুক্ত করবে, যেখান থেকে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রীরা খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন।
অনুমান করা হয় দৈনিক প্রায় ৬ লাখ যাত্রী এই মেট্রোস্টেশন এর মাধ্যমে যাতায়াত করবেন। বলাবাহুল্য এই হাওড়া মেট্রো স্টেশনের একটি অংশ যাবে গঙ্গার অন্যতম শাখা নদী হুগলি নদীর নিচে দিয়ে, যার মধ্যে থাকবে দুটি টানেল একটি up ও একটি down ট্রেনের জন্য যার দৈর্ঘ্য হবে ৫২০ মিটার দীর্ঘ ও চওড়া মেট্রো টানেল ভারতের বুকে এই প্রথম।
তবে তার জন্য সমস্যা কম হয় নি। নদীর তলায় এই টানেল বানানো টা ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একসময় জলের চাপে কাজও বন্ধ রাখতে হয়েছিল, এমনকি জলের তলায় এই দুটি টানেল কে সংযুক্ত করাও possible হয়নি। তাই এই টানেল দুটির cross passage রয়েছে নদী পেরোনোর পর তবে নদীটি পেরোতে সময় লাগবে মাত্র ১ মিনিট। তবে এই এক মিনিটই আপনার মনে শিহরণ জাগাতে যথেষ্ট। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে যখন ট্রেনটি নদীর প্রায় ৩৫ মিটার গভীরতায় জলের মধ্যে দিয়ে যাবে, আর আপনি সেখানে যাত্রী হিসেবে বসে থাকবেন সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার তুলনাই হয়না। আর সেই সময় বাংলার অধিবাসী হয়ে আপনি যে কতটা গর্ববোধ করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
- হাওড়া মেট্রো স্টেশনের মধ্যে কি কি থাকবে ?
অতি সূক্ষ্ম planning এর সাথে মেট্রো স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক এই মেট্রো স্টেশনে কাজ করছে। এই মেট্রো স্টেশনের entrance হবে হাওড়া রেল স্টেশনের ১৬ এবং ১৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে। যেখানে থাকবে চারটি ফ্লোর যার ওপরের ফ্লোরে থাকবে টিকিট কাউন্টার এবং একদম নীচের ফ্লোরে ট্রেন চলাচল করবে। এই দুটি ফ্লোর সংযুক্ত থাকবে directly। এছাড়াও বাকি ফ্লোর মেট্রোরেলের official কাজকর্ম commercial purpose-এ ব্যবহার করা হবে, washroom-এর ব্যবস্থাও থাকবে বলে শোনা গেছে।
এছাড়াও থাকবে তিনটি প্ল্যাটফর্ম মাঝের প্ল্যাটফর্ম টি হবে ১২ মিটার চওড়া ও side এর দুটি প্ল্যাটফর্ম হবে ৭ মিটার চওড়া। ট্রেনের দরজা কিন্তু উভয় দিকেই খুলবে, ২-৩ মিনিট অন্তর অন্তর up ও down-এর ট্রেন পাওয়া যাবে।
- সুরক্ষা ব্যবস্থা
সুরক্ষার দিকটিও খুঁটিয়ে দেখেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ভেঙে পড়ার আশঙ্কা এড়াতে টানেল গুলিতে থাকছে স্টিলের ফ্রেম।
এছাড়া emergency exit-এর জন্য একটি গভীর গর্ত তৈরি করা হয়েছে যা যুক্ত থাকবে এই টানেল দুটির সাথে, যার সাহায্যে যেকোনো emergency situation-এ প্যাসেঞ্জাররা ডিরেক্টলি রাস্তার ওপরে পৌঁছে যাবে। তবে তার জন্য প্রায় ২৬১ টি সিঁড়ির ধাপ ভাঙতে হবে।
বর্তমানে ৬০ কেজি ওজনের দামি রেল দিয়ে track bed টি তৈরি করা হচ্ছে পরে যার জায়গায় বসানো হবে heat proof rail, যা আমদানি করা হয়েছে সুদূর অস্ট্রিয়া থেকে এবং যার মোট ওজন ১৭০০ টন। ভারতের এই অন্যতম বৃহৎ মেট্রো স্টেশন-এ থাকবে ৫২ টি সিঁড়ি, ২৬ টি Eskeleter এবং ৭ টি lift। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটি ভারতের অন্যতম সুন্দর ও well planned মেট্রো স্টেশন হতে চলেছে। যার আভ্যন্তরীণ গঠন ও ব্যবস্থাপনা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা দিনরাত কাজ করে এত বড় প্রজেক্ট এর বেশিরভাগই শেষ করে ফেলেছেন। তাই আশা করা যায় আগামী ২০২২ মধ্যে আমরা এই অভূতপূর্ব প্রচেষ্টার ফলাফল উপভোগ করতে পারব।
ভালো লাগলে পোস্টটি সকলের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন | আপনাদের মতামত নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানান আমরা অপেক্ষায় আছি |
নিচের ভিডিওটি দেখুন