মেঘালয় এর দর্শনীয় স্থানসমূহ – Must visit place in Meghalaya
1 year ago bongcuriosity@gmail.comভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে কিন্তু “স্থান-কাল-পাত্র” এই শব্দবন্ধ একেবারেই প্রযোজ্য নয়। কারণ একবার প্রকৃতি ডাক দিলে, কেউ স্থান কাল পাত্রের অপেক্ষাই করেন না। পিঠে প্রয়োজনীয় বস্তু সহ রুকস্যাক চাপিয়ে, পাড়ি দেন অজানা সফরে।
ভ্রমণপিপাসু বাঙালিদের পাহাড় প্রিয়, নাকি সমুদ্র, নাকি জঙ্গল,,,এই চাপানউতোর চিরন্তন। কিন্তু যাঁরা ঘুরতে ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে ভ্রমণের এই তিনটি অঙ্গই যেন ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের অস্তিত্বসম। যে যাঁর নিজের জায়গায় স্বতন্ত্র এবং শ্রেষ্ঠ।
যে সকল ভ্রমণপ্রেমীরা পাহাড়ে যান, তাঁদের কাছে সময় একেবারেই গুরুত্বপূর্ন নয়। গ্রীষ্মের প্রখরতা থেকে বাঁচতে, এক টুকরো পাহাড়ি রডোডেনড্রনের সঙ্গে সখ্য যাপন হোক কী বর্ষায় খরস্রোতা নদীর মত পথ ভুলে পাহাড়ের স্বর্গে হারিয়ে যাওয়া, কিংবা শীতের কুয়াশায় এক কাপ চায়ে, পাহাড়ের সম্মোহনে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, এমন ইচ্ছে যেকোনও ভ্রমণকারীরই হয়ে থাকে। তাই যদি কেউ মেঘালয় ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করেন, এই ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় বেছে নেওয়া কিন্তু বেশ কঠিন। কারণ এই স্থান, যেকোনও সময়েই মোহময়ী। মেঘ-রৌদ্রের দৌরাত্ম্য, পাহাড়ি বনফুলের স্নিগ্ধ গন্ধ ও মেঘবালিকার কেশের মত পাহাড়ি ঝর্নার আহ্বান আপনার ক্লান্তির মুখে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে দেবেই দেবে।
রেলপথ, আকাশপথ এবং সড়কপথে আপনি যাত্রা করতে পারেন মেঘালয়ের উদ্যেশ্যে। রেলপথ এবং আকাশপথ দুটিরই ক্ষেত্রে আপনাকে সর্বপ্রথম গুয়াহাটির উদ্যেশ্যে যাত্রা করতে হবে। সেখান থেকে সড়ক পথে চারিপাশের নিঝুম পাহাড়ি কূজন উপভোগ করতে করতে, আপনি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে।
মেঘালয়ের অন্যতম বিশেষ স্থান শিলং। শিলংয়ে থাকার জন্য আদর্শ স্থান হল পুলিশ বাজার। এখানে আপনি মনের মতন থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন।
যে সকল স্থানগুলি অবশ্যই দর্শনীয়, সেই স্থানগুলি সম্পর্কেই এবার জেনে নেওয়া যাক।
উমিয়াম লেক – ১৯৬০ সালের শেষ দিকে, শিলং পাহাড়ের অন্তর্গত উমিয়াম নদীতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলেই সৃষ্ট হয় শিলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ, উমিয়াম লেক। প্রায় ১৫ কিলোমিটার অর্থাৎ ৯.৩ মাইল স্থান জুড়ে এর বিস্তার। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বোটিং এবং নানারকম মজাদার ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা।
এলিফ্যান্ট ফলস – শিলংয়ের একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হল এলিফ্যান্ট ফলস। এটির নাম শুনলেই পর্যটকদের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। এটি একটি দ্বিস্তরীও জলপ্রপাত। শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে একজন নাগরিক এই স্থানে হাতির পায়ের সাদৃশ্যসম একটি পাথরের দর্শন পান। সেই থেকেই ব্রিটিশরা এই জলপ্রপাতকে এলিফ্যান্ট ফলস নামকরণ করেন। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সেই পাথর ক্ষয়ে গেলেও, এই অঞ্চলের চিরন্তন প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
ডন বস্ক মিউজিয়াম – শিলং বাস স্ট্যান্ড থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি ষড়ভুজাকার মিউজিয়াম। স্থানীয়রা যাকে ডন বস্ক মিউজিয়াম নামেই অভিহিত করেন। মূলত এটি একটি ট্রাইবাল মিউজিয়াম। উত্তর পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সংস্কৃতি থেকে বিভিন্ন রকম আকর্ষণীয় তথ্য এই মিউজিয়ামের সম্পদ। এছাড়াও অনেক দেশ বিদেশের পড়ুয়ারা এখানে গবেষণার প্রয়োজনেও এসে থাকেন।
ওয়ার্ডস লেক – উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, আসামের তৎকালীন প্রধান কমিশনার, স্টার উইলিয়াম ওয়ার্ড একটি হ্রদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৮৯৪ সালে কর্নেল হপকিন্স এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটান। নির্মিত হয় ওয়ার্ডস লেক, শিলংয়ের অন্যতম মুগ্ধতার কেন্দ্রভূমি। জলজ যাপন ছাড়াও, এই লেকের চারিধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়ায়, আপনি আবদ্ধ হয়ে উঠবেন নিমেষে।
Cathedral Of Mary Help Of Christians – শিলংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম Cathedral Of Mary Help Of Christians। যদিও এটি পুনর্নির্মিত। পূর্বে, ১৯৩৬ সালে এই চার্চটি অগ্নিকাণ্ডের পর বিপর্যস্ত হয়। তাই নতুন করে চার্চটি আবার নির্মাণ করা হয়। শিলং মূলত একটি শৌখিন শহর, যেখানে প্রত্যেকটি স্থাপত্যই পর্যটকদের চোখকে প্রশান্তি প্রদান করে। এই চার্চের স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। এই স্থানে প্রবেশ করলে, পর্যটকদের মন শান্তিতে এবং প্রসন্নতায় ভরে ওঠে।
ডাওকি – কেমন হবে বলুন তো, যদি আকাশ এর সীমানা আপনি না খুঁজে পান? ওপরে তাকালে কিংবা নিচে তাকালেও আপনার কাছে সমস্তটা একই বর্ণের লাগে? ঠিক এমনটাই হয় শিলংয়ের ডাওকি লেকে। জল নয়, মনে হয় এক প্রকার তরল কাঁচের ওপর আপনি বিচরণ করছেন। আকাশের প্রতিচ্ছবি সেই জলীয় মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে আপনাকে ভাবতে বাধ্য করছে, আপনি যেন স্বপ্নের মত, আকাশেই কোনও এক মেঘের ভেলায় চড়ে মেঘের রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। খাসি এবং জয়ন্তীয়া পাহাড়ের মাঝের এই এক টুকরো স্বর্গ আপনি যদি না দর্শন করে থাকেন, তবে আপনার শিলং ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
Complete Travel Guide Meghalaya
লাইট লুম – ব্যস্ত রোজনামচা এবং আপনি, একে অপরের পেছনে দৌড়তে দৌড়তে নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েন! কিন্তু ভাবুন, এক ফালি মেঘ যদি আপনার পিছু নেয়? কিংবা কোনও এক অবাধ্য মেঘ কন্যার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে, সে যদি আপনাকে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটিয়ে, আপন রাজ্যে মিলিয়ে যায়? কিরম স্বপ্নের মত লাগছে তাই না! ঠিক এমনটাই হয় মেঘালয়ের লাইট লুম উপত্যকায়। পূর্ব খাসি পাহাড়ে অবস্থিত এই অঞ্চলটি ঠিক যেন স্বর্গসম। ৩০০০ সিঁড়ি অতিক্রম করে এই স্বর্গ রাজ্যে পৌঁছনো, আপনার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।
মওসিনরাম – ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে এসেছি, মেঘালয়ের বুকের এক টুকরো গ্রাম মওসিমরান, যে থাকে সদা বৃষ্টিস্নাত। মেঘালয় যাবেন, অথচ মওসিনরাম যাবেন না, তা হয় বলুন! অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ি বনভূমি দিয়ে ঘেরা, ছোটবেলার খেলনা বাড়ির মত সাজানো সুন্দর একটি গ্রাম। মওসিনরামে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১১,৮৭২ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে স্যাঁতস্যাঁতে থাকলেও, রঙ বেরঙের ফুলের সমাহার এবং মানুষের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
মাওলিং লং – ছবির মত সুন্দর রাজ্য মেঘালয়। চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও, জানেন কি, এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামটিও এখানেই অবস্থিত? মাওলিং লং হল এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম। মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত, শিকড়ের তৈরি সাঁকো, এবং চারিপাশের ছিমছাম প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার অন্তরকে প্রসন্ন করে তুলবে।
লিভিং রুট ব্রিজ – আমরা প্রায় অনেক রকম সেতুই দেখে থাকি। কোনওটি কাঠের, কোনওটি সিমেন্টের। কিন্তু গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি আস্ত একটি সেতু নিয়ে আপনাদের কি কোনও আন্দাজ আছে?
হ্যাঁ, এমনই একটি সেতু আছে মেঘালয়ে। যার নাম লিভিং রুট ব্রিজ। মাওলিং লঙের থাইলং নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি, পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষনের কেন্দ্র।
বাঘমারা – বাঘমারা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঘমারা রিসার্ভ ফরেস্ট। জঙ্গল প্রেমী মানুষ, পাহাড়ে এক টুকরো বণ্য আমেজ উপভোগ করতে অবশ্যই পরিভ্রমণ করতে পারেন এই স্থানে।
মাওসমাই গুহা – ১৫০ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট, এক ছোট্ট অজানা জগতের সফরে সামিল হতে আহ্বান জানায় মাওসমাই গুহা। অন্যান্য গুহার তুলনায় এটির দৈর্ঘ্য কম হলেও, রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার দিক থেকে এই গুহার পরিবেশ কোনও অংশে কম নয়।
শিলং পিক – যে শিলং এত মোহময়ী, এত শৌখিন, কেমন হবে বলুন তো যদি এই শিলংকে আপনি পাখির চোখ থেকে দেখেন? ৬৪৪৯ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শিলং পিক থেকে আপনি সাক্ষী হতে পারেন সমগ্র শিলংয়ের। স্বয়ং বিশ্বকবির পছন্দের এই স্থান, আপনার মনের মণিকোঠায়েও থেকে যাবে আজীবন।