কলকাতা থেকে একদিনের অজানা কিছু ঘোরার জায়গা – Offbeat places near kolkata for one day tour
1 year ago bongcuriosity@gmail.comআমাদের ব্যস্ততা মোড়া রোজনামচার মধ্যে, একটু যদি অবসরের ফুরসৎ পাওয়া যায়, তখন মনে হয় পছন্দের লাল নীল ইচ্ছের জমাট বাঁধা রুকস্যাকটার একটু ধুলো ঝেড়ে নিয়ে, ‘এই শহর থেকে আরও অনেক দূরে, চলো কোথাও চলে যাই..’ কিন্তু একটানা বেশ অনেকদিন শহরের বাইরে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে থাকা হয়ে ওঠে না। তার ওপর এখন শীতকাল! শীতকাল মানেই মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। তাই আজ এই বিশেষ পর্বে থাকবে, শীতকালে, অন্তত একদিন বা একবেলার জন্য, কাছে পিঠে কোথায় একটু আপনি আপনার আপনজন নিয়ে নিভৃত যাপন করতে পারবেন।
নিউ দীঘা পার্ক – হয়ত নাম শুনেই আপনার সামনে এখন দুরন্ত ঢেউয়ের জলোচ্ছ্বাস, নারকেল গাছের সারি, ঝিনুক মুক্ত প্রভৃতির সাম্রাজ্য, ভ্রমণ প্রিয় বাঙালির খুব কাছের দীঘার ছবি ভেসে উঠল তাই নাহ্? কিন্তু নিউ দীঘা নাম হলেও আপনার নিকটেই তৈরি হয়েছে এই নামের একটি পার্ক। হুগলির চন্দননগরে সুসজ্জিত এক মনোরম পার্কের নাম হল নিউ দীঘা পার্ক। এটি একদম দিল্লি রোডের পাশেই অবস্থিত। সপরিবারে এক শীতের দুপুরে আসর জমিয়ে ফেলুন এই পার্ককে ঘিরে। ছোট বাচ্চা থেকে বড়, সকলেরই মন ভালো করে তুলবে এই পার্কের রমনীয় পরিবেশ।
কোলকাতা থেকে দিল্লি রোড ধরে জি আর টি রোডের মাধ্যমে আপনি সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন চন্দননগর। এছাড়া আপনি যদি রেল পথে আসতে চান, তাহলে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনের মাধ্যমে, ব্যান্ডেল নেমে, সেখান থেকে যেকোন লোকাল ট্রেন ধরে, ৫০ মিনিটের মধ্যে চন্দননগর রেলস্টেশন পৌঁছতে পারেন। কলকাতা বা হাওড়া ফেরি ঘাট থেকে শ্রীরামপুর হয়ে অথবা জগদ্দল ঘাট থেকে লঞ্চ করে চন্দননগরে রানি ঘাটে এসে পৌঁছতে পারেন। যদি শিয়ালদহ থেকে আসেন তাহলে জগদ্দল স্টেশনে নেমে চলে আসবেন জগদ্দল ঘাটে। সেখান থেকে লঞ্চ মারফত পৌঁছে যেতে পারবেন চন্দননগর, এবং সেখান থেকেই আপনি চলে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যের দিকে।
ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক – হুগলি জেলার চন্দননগরে আরও একটি জনপ্রিয় পার্ক হল ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক। বাহারি রঙের ফুল ও গাছের সারিতে সজ্জিত এই পার্কের তৃপ্তিদায়ক পরিবেশ, শীতের একটি দিনকে বেশ জমিয়ে দিতে পারে। বনভোজনের জন্য দারুন আদর্শ স্থান এটি। হাতে সময় নিয়ে সারা পার্ক ঘুরে দেখার স্মৃতি, আপনাকে যেকোনও মুহূর্তে তাজা করে তুলবে। কলকাতা থেকে দিল্লী রোড ধরে কিংবা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে আপনি সহজেই আপনার গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে পারবেন।
নীল দীপ গার্ডেন – কলকাতা থেকে সামান্য একটু দূরে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবস্থিত বারুইপুর। এখানে একটি সুন্দর, সাজানো গোছানো পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে গড়ে উঠেছে নীল দীপ গার্ডেন। বিস্তৃত বাগান, রঙ বেরঙের ফুলের সমাহার, নাম না জানা পাখির কূজন যেমন পাবেন, তেমনই পাবেন সকল রকম বিনোদন সামগ্রী। সুইমিং পুল, পার্ক, এক বেলার থাকার সুবন্দোবস্তসহ এই স্থান, শীতের পিকনিকের পরিবেশের জন্য একেবারে যথাযথ। হাওড়া থেকে বারুইপুরগামী যেকোনও বাসে করেই অতি সহজে পৌঁছে যাওয়া যাবে এই পিকনিক স্পটে।
মায়াপুর – আপনি যদি খানিক আধ্যাত্মিক হন, এবং চান শীতের কয়েক বেলা কোথাও অবসর যাপনের সঙ্গে ঈশ্বর আরাধনাও করবেন, তাহলে অবশ্যই রওনা হন মায়াপুরের উদ্দেশ্যে। জলঙ্গী এবং গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে উঠেছে ইসকনদের এই তীর্থস্থান। মন্দিরের মাধুর্যে যেমন আপনি মুগ্ধ হবেন, তেমন এই মন্দির সংলগ্ন ক্ষেত্র থেকে চড়ুইভাতি না করে এলেও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কলকাতা থেকে মায়াপুরগামী যেকোনও বাসে করে আপনি আপনার সফর শুরু করতে পারেন। এছাড়া কৃষ্ণনগর থেকে অটো করে মায়াপুর ঘাট থেকে, নৌকায় নদী পাড় হলেই আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্যে।
গড় মন্দারণ – ইতিহাসআশ্রিত একটি উপযুক্ত পিকনিক স্পট হয়ে উঠতে পারে গড় মন্দারণ। এই জায়গাটি কামারপুকুর থেকে ঘাটাল যাওয়ার পথে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২০৬ খিস্তব্দে যে সময়ে বাংলায় বখতিয়ার খিলজী আসেন, তখন বাংলা যেকটি ভাগে বিভক্ত ছিল, সেই একটি ভাগের উপভাগ হল মন্দারণ। এই অঞ্চলে একটি প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসবশেষ আছে। সাহিত্য-প্রেমীদের কাছে যা অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, কারণ এই দুর্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে, বঙ্কিচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসে। কামারপুকুর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থান। হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে, তারকেশ্বর স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে বাসে ৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে খুব সহজে পৌঁছানো যায় কামারপুকুর। সেখান থেকেই আপনি গড় মন্দারণ যাওয়ার পরিবহন পেয়ে যাবেন।
কলকাতার কাছাকাছি কিছু ঘোরার জায়গা / Weekend trip near Kolkata
হাওড়া জেলার ডুয়ার্স – কলকাতা বা হাওড়ায় থেকে যদি উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের মত প্রাকৃতিক আমেজে মিশে যেতে চান শীতের দুপুরে, তাহলে কিন্তু মন্দ হয় না। হাওড়া থেকে আমতাগামী ট্রেনে উঠে, মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা পেরোলেই আপনি পৌঁছবেন ঝালুয়াড়বেড় স্থানে।এখানেই আপনি পাবেন এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। গাছ পালা দিয়ে ঘেরা এই স্থান হয়ে উঠেছে হাওড়ার ডুয়ার্স।
পুস্পবন – শীতকালে পিকনিকের অন্যতম এক জনপ্রিয় স্থান কিন্তু নিঃসন্দেহে ডায়মন্ড হারবার। এখানকার বিখ্যাত পিকনিক স্পট হল পুষ্পবন। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই পুষ্পবন ভ্রমণের সেরা সময়। আপনি যদি ইতিহাসপ্রেমী হন, তাহলে এখানকার দুটি জিনিস আপনাকে আকর্ষন করবেই। সাম্প্রতিক “সেনসেশন” পুষ্পবনকে ঘিরে রয়েছে দুটি কেল্লা। একটি পর্তুগিজ দ্বারা এবং অন্যটি ইংরেজ দ্বারা নির্মিত। কিন্তু এই দুই কেল্লার ধ্বংসাবশেষই এখন অবশিষ্ট। তবুও, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা এই দুই নিদর্শন আপনাকেও রোমাঞ্চিত করে তুলবে। পুষ্পবনে চড়ুইভাতি করতে গেলে, আগে থেকে বুকিং করে রাখতে হয়। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে করে সহজেই ডায়মন্ড হারবার পৌঁছনো যায়।
ক্যাপ্টেন ভেরি – শীতের দুপুর, পিকনিকের মজা, এবং সঙ্গে যদি উপরি পাওনা হিসেবে একদম ভেরি থেকে সংগৃহিত টাটকা মাছ দোসর হয়, কেমন হবে বলুন তো? শীতের দুপুর কিন্তু একেবারে জমে মালাই হয়ে যাবে। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটনের ক্যাপ্টেন ভেরি একটি অন্যতম সেরা পিকনিক স্পট। চিংড়িঘাটা এবং মেট্রোপলিটন বাস স্টপের একদম মধ্যবর্তী স্থান সংলগ্ন এই অঞ্চলটির উদ্দেশ্যে একটি শীতের দিন আপনাকে বরাদ্দ রাখতেই হবে। বিকেলের দিকে এখানে আপনি ইচ্ছেমত বোটিংও করতে পারবেন।
বন্ধুরা, শহরের কাছাকাছি বা শহর থেকে মাত্র কিছুটা দূরে, এক বেলার জন্য বিবৃত এই স্থানগুলি সম্পর্কে জেনে আপনার কেমন লাগল, জানাতে কিন্তু একদম ভুলবেন না আমাদের কমেন্ট বক্সে। কোথায় আপনার পছন্দ এবং অভিজ্ঞতার কথাও অবশ্যই উল্লেখ করবেন।