কলকাতার কাছাকাছি কিছু ঘোরার জায়গা / Weekend trip near Kolkata
2 years ago bongcuriosity@gmail.comকলকাতার কাছাকাছি কিছু ঘোরার জায়গা / Weekend trip near Kolkata
“চলো যাই চলে যাই..” বলে, শীতের দুপুরে একদিন পরিপাটি করে সোনা রোদ্দুর গায়ে মেখে, চলুন ঘুরে আসা যাক কোনও মনোরম স্থানে। সারা সপ্তাহ জুড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম, পাহাড় প্রমাণ কাজের ক্যাচক্যাচানি, বসের চোখ রাঙানি, রোজকার একঘেয়েমি থেকে নিস্তার পেতে কার না ইচ্ছে করে! তাই, সপ্তাহান্তে এক দুদিনের জন্য কাছে পিঠে কোথাও ঢু মেরে এলে, মন্দ হয় না বৈকি! আজকের এই বিশেষ এপিসোডে থাকল, কলকাতার কাছাকাছি এমন কিছু স্থান, যেখানে সানন্দে আপনি কয়েক রাত কাটিয়ে আসতেও পারবেন, এবং অফিস কামাইয়ের ভয় বা বসের মেজাজ কিছুই আপনাকে সম্মুখীন করতে হবে না। তার আগে আপনি যদি এই চ্যানেলে নতুন হন, অবশ্যই লাইক এবং সাবস্ক্রাইব করতে কিন্তু ভুলবেন না। চলুন, আর দেরি না করে শুরু করা যাক আজকের সফরনামা।
• টাকি
কলকাতা থেকে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টাকি, শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র বললে অনেক কম বলা হবে। এই শহর হল ভারত এবং বাংলাদেশের অন্যতম সীমান্তের অংশ। ইছামতি নদী দ্বারা বিভক্ত হয়েছে এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা। আপনার পৈতৃক ভিটে ওপারে হলে, অবশ্যই টাকি একদিন হলেও আপনি ঘুরে আসতে পারেন। আবেগ এবং স্মৃতি রোমন্থনের সঙ্গে লঞ্চে চড়ে ইছামতির জলজ পথে ভ্রমণও উপভোগ করতে পারবেন কয়েক ঘণ্টা। একবেলার পিকনিকের জন্য তো বটেই, এমনকি একদিনের বেশি থাকার জন্যও উপযুক্ত পর্যটন কেন্দ্র টাকি। নিউটাউন পেরিয়ে বাসন্তী হাইওয়ের রাস্তা ধরে বেশ কিছু ঘণ্টার ব্যবধানে আপনি পৌঁছে যাবেন এই জায়গায়।
কলকাতার কাছেই কিছু ঘোরার জায়গা যেখানে আপনি গাড়ি করে পৌঁছে যেতে পারবেন-Best Weekend Destinations near kolkata by car
• মাইথন
আসানসোল থেকে প্রায় দশ কিলোমিটারের মধ্যে পড়বে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মাইথন। যাওয়ার পথে আপনি কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে মাকে দর্শন করেও যেতে পারবেন। মাইথনে আপনি এক বা একাধিক রাত কাটাতেও পারেন। রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মাইথন ট্যুরিস্ট লজ হোক কিংবা যুব আবাস অথবা পিডবলুডি বাংলো, রাত্রি নিবাসের জন্য পাবেন হরেক রকম বিকল্প। এছাড়া মাইথন ড্যামে সপরিবারে বোটিং, আপনার যাত্রাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলবে। গাড়িতে করে অথবা হাওড়া থেকে আসানসোলগামী ট্রেনে করে স্টেশনে নেমে স্থানীয় যানবাহন মারফত আপনি পৌঁছে যাবেন মাইথন।
• মৌসুনী দ্বীপ
প্রতিনিয়ত শহুরে কোলাহল, যানজট পেরিয়ে মন চায় একটু নিরিবিলিতে, খোলা আকাশের তলায়, নীল জলরাশির উচ্ছ্বাসকে সাক্ষী করে, মুহূর্তের পর মুহুর্ত যাপন করতে। কিন্তু এক বেলা কি একদিনের জন্য, কলকাতার কাছাকাছি এমন স্থান কি আদৌ ‘ছেলের হাতের মোয়া’র মত পাওয়া সহজ? এর উত্তরে আপনাদের আশ্বস্ত করে জানাই, অবশ্যই এমন স্থান পাওয়া সহজ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় মুড়িগঙ্গা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত মৌসুনী দ্বীপ। চিনাই নদী দ্বারা বিভক্ত হওয়ার কারণে এই দ্বীপটি গড়ে উঠেছে। অসংখ্য মানুষ নিয়ে জনবসতি গড়ে উঠলেও, কংক্রিটের আধিপত্য নেই বললেই চলে। কাদা মাটির বাড়ি বা ‘Mud House’ অথবা বিভিন্ন মাপের তাঁবু হয়ে উঠতে পারে আপনার আমোদ-কেন্দ্র। কলকাতা থেকে প্রায় ১১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে নামখানা নামতে হবে। সেখান থেকেই টোটো বা অটর সাহায্যে আপনি পৌঁছবেন মৌসুনি দ্বীপের মত এক স্বপ্ন রাজ্যে।
• দরিয়াপুর
হাওড়া থেকে কাঁথির ট্রেন ধরে, রওনা হন দরিয়াপুরের উদ্দেশ্যে। কাঁথি স্টেশন থেকে অটো করে চলে যান মৃন্ময়ী কুটির। রাত্রিবাস করতে চাইলে সেখানেই সমস্ত কিছুর সুব্যবস্থা আছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’ র বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় এই স্থান জুড়ে। প্রকৃতির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ নিবিড় হয়ে যাওয়ার আদর্শ স্থান হিসেবে, নিঃসন্দেহে এটি আপনার প্রিয় হয়ে উঠবে। গাড়িতে করে অথবা ট্রেনে করে দীঘা স্টেশনে নেমে বাস বা অন্যান্য গাড়ির মারফত আপনি এই স্থানে পৌঁছে যেতে পারবেন।
• বকখালি
কলকাতা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী এক সমুদ্র সৈকত বকখালি, একটি অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের স্থান। ভারতের মধ্যে একমাত্র এই সৈকতে সাদা বালি দেখতে পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, মোহনাভিত্তিক বেশিরভাগ কুমিরের বিচরণ এই স্থানকে কেন্দ্র করে লক্ষিত হয়। এই অঞ্চলে রয়েছে প্রসিদ্ধ বিশালক্ষ্মী মন্দির। এছাড়াও বকখালি থেকে দু কিলোমিটার দূরে ফ্রেজারগঞ্জকে আপনি রাখতে পারেন সাইট সিয়িংয়ের তালিকায়। এখানকার গগনচুম্বী বায়ুকলগুলি আপনার মুগ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে। কলকাতার সঙ্গে বকখালি যেহেতু সড়ক পথেই সংযুক্ত, তাই বাসে বা গাড়িতে যাওয়ার কোনও সমস্যাই নেই৷ কলকাতা থেকে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক পথে বা রেলপথে নামখানা স্টেশন পযর্ন্ত গিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় গাড়ি যোগে বকখালি যাওয়া যায়
• বড়ন্তি
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে আসানসোলগামী ট্রেনে করে রওনা হন আদ্রার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে কিছুটা পথ পেরোলে, পাহাড় এবং জলাধার ঘেরা ছোট্ট শহর বড়ন্তি। পলাশ, শিমুল, পিয়ালের রাজ্যও যেমন এখানে উপভোগ করতে পারবেন, সেরকমই শীতের ভোরে পান করতে পারবেন মহুয়ার রস। খেঁজুর গাছের আধিক্যের জন্য স্থানীয় গ্রামগুলি থেকে খাঁটি খেঁজুর কিনতেও পারবেন পরিবারের জন্য। বড়ন্তি ড্যামই হল মধ্যমণি এই অঞ্চলের। বোটিং করা না গেলেও, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই নিরিবিলিতে কাটালেও একঘেয়ে লাগবে না। সঙ্গে যদি সাক্ষী হতে পারেন একটি মনোরম সূর্যোদয় অথবা সূর্যাস্তের। ট্রেনে করে আসানসোল স্টেশনে নেমে, অটো বা বাস যেকোনও একটি গাড়ি করে এই খেঁজুরের রাজ্যে আপনি উপনীত হতে পারবেন।
• মাছরাঙা দ্বীপ
কলকাতা থেকে মাত্র ৭১.৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাছরাঙা দ্বীপ, হয়ে উঠুক আপনার সপ্তাহান্তের অবসর যাপনের দোসর। ইছামতির মাঝখানে অবস্থিত এই দ্বীপের একেবারে কাছেই অবস্থিত ওপার বাংলা, বাংলাদেশ। বাংলাদেশি জেলেদের মাছ ধরতেও দেখা যাবে এই অঞ্চল থেকে। আপনার যাত্রাকে রোমাঞ্চকর করে তুলতে আপনি ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও অ্যাডভেঞ্চার করতে যেতে পারেন গাইডের সঙ্গে। হরেক রকম পাখি, জন্তু জানোয়ারের দেখাও ভাগ্যক্রমে মিলতে পারে। এছাড়া মাছরাঙা পাখির দর্শন পাওয়াও বিশেষ দুষ্কর হবে না এই অঞ্চলে। ব্যস্ত রোজনামচা থেকে একটু ছুটি নিয়ে, এমন নিরিবিলি স্থানে রাত্রিযাপন কিন্তু আগামী দিনগুলোকে বাঁচার রসদ দেওয়ার জন্য বেশ উপকারী। সায়েন্স সিটি পেরিয়ে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে, এই দ্বীপে গাড়িতে করে আপনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই পৌঁছবেন আপনার সফসঙ্গীদের সঙ্গে।
প্রিয় দর্শক বন্ধুরা, আজকের এপিসোড আপনাদের কেমন লাগল, আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। এর মধ্যে কোন জায়গাটি আপনি গেছেন, বা যাবেন, সে বিষয় নিয়েও আপনার মতামত প্রকাশ করবেন। আজকের ভিডিও এই পর্যন্ত। এমন আরও অনেক ভিডিও পেতে হলে অবশ্যই আমাদের বেল বাটনে ক্লিক করবেন। দেখা হবে পরবর্তী ভিডিওয়।