কলকাতার কিছু বিখ্যাত মন্দির যা না দেখলে কোলকাতা ঘোরা অসম্পূর্ণ
4 years ago bongcuriosity@gmail.comকলকাতার কিছু বিখ্যাত মন্দির
কোলকাতা যেমন ঐতিহাসিক তেমনি সাংস্কৃতিক। ঐতিহ্যবাহী কলকাতার মানুষ যেমন আধুনিকতায় বিশ্বাস করে, তেমনি বিশ্বাস করে আধ্যাত্মিকতায়, এই আধ্যাত্বিকতার নিদর্শন হিসাবে কলকাতার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক ছোট বড় মন্দির, মসজিদ ও গির্জা। এরকমই কিছু মন্দির ও তাদের পেছনে রোমাঞ্চকর তথ্য আজ আমরা জানবো।
১। কালীঘাট (Kalighat)
১৮০৯ সালে বরিশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী আদিগঙ্গা বা ভাগীরথী নদীর তীরে এই মন্দিরটি স্থাপন করেছিলেন।আনেকে মনে করেন ক্যালকাটা নামটিও সেই সময় কালীঘাট থেকেই এসেছিল। প্রায় দু’শ বছরের পুরনো মন্দিরের মাহাত্ম এখানকার নিত্যদিনের ভক্তের সমাগম এর মাধ্যমে বোঝা যায়। তাছাড়াও ৫১ টি শক্তিপীঠ এর মধ্যে এটি একটি শক্তিপীঠ। যেখানে দেবীর ডান পায়ের আঙ্গুল পড়েছিল। দেবীর মূর্তিটি একেবারে অন্যরকম যা আপনার শরীরে শিহরণ জাগায়। এই মূর্তিটি তৈরি করেছেন আত্মারাম ব্রহ্মচারী এবং ব্রহ্মানন্দ গিরি নামক দুই ব্যক্তি।
বর্তমান মূর্তিতে রয়েছে ৩টি বড় চোখ একটি সোনা তৈরি লম্বা জিৎ এবং চারটি সোনার তৈরি হাত। এর মধ্যে দুটি হাতের এটিতে রয়েছে তরবারি যা ঐশ্বরিক জ্ঞানের প্রতীক, আর একটি হাতে রয়েছে অসুররাজ শুম্ভের মুন্ডু যা অহংকারের প্রতীক। এগুলি তাৎপর্য হলো ঐশ্বরিক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ তার অহংকার এর বিনাশ ঘটালে তবেই মোক্ষলাভ করতে পারবে। আর দুই হাতের মুদ্রার মাধ্যমে দেবী অভয় ও আশীর্বাদ দেন।
মূল মন্দির ছাড়াও এখানে রয়েছে ষষ্ঠীতলা। দেবী ষষ্ঠী, শীতলা ও মঙ্গলচন্ডীর প্রতীকরূপে এখানে তিনটি শিলা পূজিত হয়।এছাড়াও রয়েছে নাটমন্দির যেখান থেকে দেবীর মূর্তি দেখা যায়।
জোর বাংলা নামের একটি বড় দালান, হাড়িকাট তলা যেখানে বলি হয় এবং পবিত্র কুন্ডু পুকুর যেখান থেকে দেবী সতীর অঙ্গ উদ্ধার হয়েছিল এছাড়াও রয়েছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির।
• কিভাবে যাব ?
কলকাতা যেকোনো প্রান্ত থেকে কালীঘাটের বাস পাওয়া যাবে এছাড়াও যতীন দাস পার্ক বা কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে নেমে যাওয়া যাবে।
• মন্দির খোলার সময় ?
ভোর ৫টা থেকে দুপুর ২তো পর্যন্ত আবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত।
২। বিড়লা মন্দির (Birla Mandir)
রাধাকৃষ্ণের এই অসম্ভব সুন্দর মন্দিরটি নামকরা শিল্পপতি বিড়লা পরিবার তৈরি করেছেন। ১৯৭০ সালে মন্দিরটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় দীর্ঘ ২৬ বছর সময় মন্দিরটি তৈরি হতে।১৯৯৬ সালে স্বামী চিদানন্দ জি মহারাজ মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। ৪৪ কাঠা জুড়ে অবস্থিত এই মন্দিরটি এবং পুরোটাই সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি যা ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির এর কথা মনে করিয়ে দেয়। মন্দিরের গায়ে ভগবদত গীতার নানান চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও স্থাপত্যের রাজস্থানী মন্দিরের ছোঁয়া রয়েছে। মূল মান্দিরে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। তার বাঁ দিকের মন্দিরে দুর্গা এবং ডান দিকের মন্দিরে ধ্যান মগ্ন শিবের মূর্তি রয়েছে। জন্মাষ্টমীর দিন ভক্তদের ভিড় দেখা যায়।
• কিভাবে যাব ?
মন্দিরটি বালিগঞ্জের আশুতোষ মুখার্জী এভিনিউতে অবস্থিত।
• মন্দির খোলার সময় ?
ভোর ৫:৩০থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত আবার বিকেল ৪:৩০ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
৩। লেক কালীবাড়ি
এই মান্দিরটি শ্রী শ্রী ১০৮ করুণাময়ী কালী মাতা মন্দির নামে প্রসিদ্ধি। প্রায় 60 বছর আগে শ্রী শ্রী হরিপদো চক্রবর্তী মহাশয় মায়ের থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির স্থাপন করেন। ছোটবেলা থেকেই কালিমায়ের ধ্যান করলেও পরবর্তী জীবনে তিনি ছিলেন এক সরকারি কর্মচারী কিন্তু আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার টান তাকে পরজীবনের সন্ন্যাসী বানিয়ে তোলে এবং তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপকার করতে থাকেন। অন্যান্য কালিমাতার মূর্তির ন্যায় এই মূর্তিটি রুদ্ররূপ ধারী নয় কারণ এখানে মা রয়েছেন করুণাময়ী রুপে আর তিনি বসে রয়েছেন পঞ্চমুন্ডির আসনে। ২০০২সালে মন্দিরটি পূর্ণ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তবে টাকার অভাবে এখনো কাজটি সমাপ্ত হয়নি।
বর্তমানে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীমাতা স্মস্থা।
• কিভাবে যাব ?
কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে নেমে হাঁটা পথে পৌঁছে যাবেন কালীবাড়ি মন্দির।
• মন্দির খোলার সময় ?
ভোর ছয়টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এবং বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে রাত 9 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মঙ্গলবার ও শনিবার বন্ধ হওয়ার টাইম আধঘন্টা করে পিছিয়ে যায়।
৪। অগ্নি মন্দির (Agni Mandir, Parsi Temple)
কলকাতা বৈচিত্রের শহর এখানে ধর্মের বৈচিত্র নজর কাড়ে তাই হিন্দু মন্দির এর পাশাপাশি পার্সিদের এই মন্দিরটি উল্লেখের দাবি রাখে। যেখানে পূজিত হন অগ্নিদেব। ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটিতে পার্সি স্থাপত্য লক্ষ্য করা যায়। মান্দিরের একতলাতে রয়েছে একটি বড় হল, যেখানে সমস্ত ধার্মিক অনুষ্ঠান গুলি পালিত হয়। মন্দির দুতলাই প্রকৃত পূজা হয়, যেখানে সর্বক্ষণ আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়। তবে সেখানে সাধারণ মানুষের যাওয়ার অনুমতি নেই। এক তলার হলেই জলন্ত অগ্নি ছবি রয়েছে সাধারণ মানুষের দেখার জন্য। সমস্ত ধর্মের মানুষই এখানে যেতে পারেন।
• কিভাবে যাব ?
কলকাতায় অবস্থিত চাঁদনী চক মেট্রো স্টেশনে নেমে তিন মিনিটের হাঁটাপথ এখানে পৌঁছে যাবেন।
• মন্দির খোলার সময় ?
মন্দিরটি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
৫। ইসকন মন্দির (Iskcon Temple)
শুধুমাত্র কলকাতা নয় সমগ্র বিশ্বে ইসকন মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে যেখানে সযত্নে পূজিত হন রাধা কৃষ্ণ। সিল প্রভুপাদ জি ছিলেন রাধা কৃষ্ণের পরম ভক্ত এবং তিনি সমগ্র বিশ্বে ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং কৃষ্ণ বাণী প্রচার করেন। ১৯৭০ সালে কলকাতার মিন্টো পার্কের কাছে তিনি প্রথম ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রানাইট ও মার্বেল এর অসাধারণ স্থাপত্য তার মাঝেই নানা অলংকারের সুসজ্জিত রাধাকৃষ্ণ এবং জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি থেকে নজর ফেরানো দায়। মন্দিরটি সব ধর্মের মানুষকে সাদরে আমন্ত্রণ করে।
• কিভাবে যাব ?
কলকাতার রবীন্দ্রসদন মেট্রো থেকে হাঁটাপথে ৫ মিনিটের দূরত্ব।
• মন্দির খোলার সময় ?
মন্দিরটি খোলা থাকে ভোর ৪:৩০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং বিকেলে ৫টা থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত।
৬। চাইনিজ কালি মান্দির (Chinese Kali Temple)
কলকাতা যে আন্তরিকতা ও মেলবন্ধনের শহরস তা মন্দিরটির নাম শুনেই বোঝা যায়। যেখানে এক হিন্দু দেবী চাইনিজ লোকেদের দ্বারা ভক্তির সাথে পূজিত হয়। ট্যাংরার চায়নাটাউন বা মহেশতলা রোডের এই মান্দিরটিতে কালী মাতা ও সাথে মাহাদেব এর পুজ হয়। কথিত আছে কোনো এককালে এক বৌদ্ধ দম্পতির সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সমস্ত চিকিৎসকেরা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় গাছের তলায় শিলারুপে ভবনের সামনে এ দম্পতি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তার পরেই হঠাৎ করেই তাদের সন্তান ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। সেই দম্পতি সেই থেকে হিন্দুদের দেবী কালী মায়ের পূজার প্রচলন করেন। এই দুই শিলা এখনও এই মন্দিরে পুজো হয়।
প্রত্যেকদিন বহু হিন্দুদের পাশাপাশি বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও চাইনিজ ভক্তরা এখানে চাইনিজ নিয়মে মায়ের আরাধনা করেন।প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় চাওমিন।
এই চাইনিজ পাড়ার সবার উদ্যোগে ও অর্থ সাহায্যে আড়ম্বরের সাথে কালী পূজার অনুষ্ঠান করা হয় তখন অবশ্য হিন্দু ব্রাহ্মণ এর ডাক পড়ে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই মান্দিরটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন আইসেন চেইন।
• কিভাবে যাব ?
টপসিয়া বাইপাস থেকে মন্দিরে যাওয়ার অটো পেয়ে যাবেন।
• মন্দির খোলার সময় ?
মান্দিরটি খোলা থাকে সাকাল ৬টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত আবার বিকালে ৫টা থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত।
৭।পরেশনাথ মন্দির (Pareshnath Jain Temple)
ব্রিটিশ যুগে কলকাতা ছিল বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু । সেই সুত্রে বহু জৈন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী কলকাতায় আসেন। তাদের মধ্যে কিছু জন ব্যবসায়ী কলকাতায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। তার থেকেই কলকাতায় এই ধর্মের সূত্রপাত বলে মনে করা হয়। ১৮৩২ সালে রায় বদ্রিদাস বাহাদুর, ২৩ তম তীর্থঙ্কর পরেশনাথের উদ্দেশ্যে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরটির ভেতরে রয়েছে চারটি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। মূল মন্দিরে রয়েছেন শীতল নাথ ভগবান, এরপর বাকি তিনটি মন্দিরে রয়েছে চন্দ্রপ্রভু স্বামী ভগবান, শ্রী মহাভির স্বামি ও জৈন আচার্য জিম কৌশলসুরিজি পদচিহ্ন। মন্দিরটির মূল আকর্ষণ এখানকার শৈল্পিক কারুকার্য মন্দিরের দরজা ও জানালার সূক্ষ্ম কাচের কাজ নজরকাড়ে। তাছাড়া রয়েছে মন্দিরের বাইরে সুসজ্জিত বাগান বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি এবং নজরকাড়া ঝাড়বাতি, আর যে জিনিসটি মানুষ সবথেকে বেশি আকর্ষণ করে তাহল প্রভু শীতল নাথজির মাথায় খচিত হীরাটি । যে কোন ধর্মের মানুষ এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে।
• কিভাবে যাব ?
কলকাতা বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ।
• মন্দির খোলার সময় ?
মন্দিরটি খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবার দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত।
৮।ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি (Thanthania Kalibari)
১৮০৩ সাল থেকে উত্তর কলকাতার অন্যতম পরিচিতি ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। শংকর ঘোষ নামক এক অভিজাত ও ব্যক্তি এই মন্দির স্থাপন করেন তবে এখানকার মূর্তি আরো পুরনো বলেই প্রচলিত আছে। কলেজস্ট্রিট মার্কেটের কাছে উত্তর কলকাতার বিধান সরণিতে বর্তমানে যেখানে এই মন্দিরটি রয়েছে সেখানে এককালে গভীর জঙ্গল ছিল এবং সেখানে ডাকাতের উপদ্রব ছিল বেশ তাই ডাকাতের আশঙ্কা হলে এই মন্দিরের ঘন্টা বাজিয়ে গ্রামের মানুষদের সচেতন করা হতো, ঘন্টার সেই ঠনঠন শব্দ থেকে এই মন্দিরের নাম হয় ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। এখানে মা কালী পূজিত হন সিদ্ধেশ্বরী রূপে, মায়ের ভক্তদের মতে মা খুব জাগ্রত তাই আমাবস্যা হোক বা কালীপূজা ভক্তদের কমতি হয় না কখনই।
• কিভাবে যাব ?
হাওড়া অথবা শিয়ালদা থেকে বাসে করে কলেজ স্ট্রিটে নেমে এই মন্দিরে আপনি যেতে পারবেন।
• মন্দির খোলার সময় ?
মান্দিরটি খোলা থাকে সকাল ৬ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত আবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
৯। বৌদ্ধ মন্দির (Nipponzan Myohoji Buddhist Temple)
কলকাতার বুকে বহু বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে তবে তার মধ্যে জাপানিজ বৌদ্ধ মন্দির টি সবথেকে জনপ্রিয় ও সুন্দর। তবে ঢাকুরিয়া লেক রোডে অবস্থিত এই মন্দিরটি এখনও বহু কলকাতা বাসিদের কাছে অজানা। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন নিচিদাতসু ফুজি (1885 – 1985), যিনি ছিলেন নিচিরেন (Nichiren) নামক এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী শিষ্য। নিচিদাতসু ফুজি (Nichidatsu Fujii) তার গুরুর থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৩১ সালে ভারতে আসেন এবং ১৯৩৫ সালে এই মন্দিরটি স্থাপন করেন। ধপধপে সাদা মন্দিরে গোল্ডেন রঙের বর্ডার, মাথার ওপর নির্মিত স্তুপ আকৃতি স্থাপত্য সত্যিই অসাধারণ, তার সাথে সামনে রয়েছে বাগান। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে চীনা ভাষায় লেখা রয়েছে আমি লোটাস ফ্লাওয়ার সূত্র অসাধারণ নিয়মে আশ্রয় নিতে চাই উল্লেখ্য লোটাস ফ্লাওয়ার সূত্র হল বুদ্ধের মতে মোক্ষ লাভের অন্যতম পথ। সিঁড়ি দিয়ে মন্দিরে ঢোকার পর যা আপনাকে মুগ্ধ করবে তাহল মার্বেলের তৈরি সুসজ্জিত বুদ্ধদেবের মূর্তি এবং দেওয়ালে নানা জাপানিস ক্যালিগ্রাফি আরো অনেক কিছু।
• কিভাবে যাব ?
AMRI হসপিটালিটি পেরিয়ে ঢাকুরিয়া ব্রিজের নিচ দিয়ে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন এই মন্দিরটি।
• মন্দির খোলার সময় ?
খোলা থাকে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৬:৩০ পর্যন্ত আবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধে ৬:৩০ পর্যন্ত।
১০। সাই মন্দির (Sai Baba Temple)
২০১৩ সালে বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি হয় এই সাই মন্দির। এখানকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ বিশেষ উল্লেখ এর দাবি রাখে। সুন্দর ঝকঝকে সাদা মার্বেলের মন্দির ও তার গোল্ডেন সিংহাসনে বসে রয়েছেন স্বয়ং সাই বাবা তারসাথে ভজন এর সুর, মনে শান্তি এনে দেয়।
• কিভাবে যাব ?
মান্দিরটি পানিহাটির ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডে আবস্থিত। আপনি শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে অথবা হাওড়া থেকে ব্যারাকপুর গামী বাস ষ্টেশনে নেমে হেঁটে ট্রাফিক মোড়ে এসে পৌঁছে যেতে পারবেন এই মন্দিরে।
• মন্দির খোলার সময় ?
মন্দিরটি খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২:৩০ পর্যন্ত ও বিকেলে ৪টে থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
১১। দক্ষিণেশ্বরের মন্দির (Dakshineswar Kali Temple)
জনপ্রিয় এই মন্দিরটি ১৮৫৫ সালে রানী রাসমণি তৈরি করেছিলেন। মা কালীর থেকে স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের ইচ্ছামত হুগলি নদীর তীরে ২০ একর জায়গাজুড়ে মায়ের মন্দির স্থাপন করেন। এর একাংশে একসময় ছিল মুসলিমদের কবরখানা। এই মন্দির প্রাঙ্গণে মা পূজিত হন শ্রীশ্রী জগদীশ্বরী মহাকালী রূপে, এছাড়াও নিত্য পুজো হয় রাধাকৃষ্ণের। এছাড়াও রয়েছে ১২ টি শিব মন্দির যেখানে শিবের ভিন্নরূপ পূজিত হয়। বিশাল মন্দির প্রাঙ্গন ও গঙ্গার ঘাট মন জুড়িয়ে দেয়।
• কিভাবে যাব ?
হাওড়া থেকে বাসে করে আপনি দক্ষিণেশ্বর পৌঁছে যেতে পারবেন।
• মন্দির খোলার সময় ?
সকাল ৬টা থেকে ১২:৩০ ও বিকেল ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
১২। বেলুড় মঠ (Belur Math)
গঙ্গার ধারে ৪০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এটি আসলে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রধান অফিস। রামকৃষ্ণের পরম শিষ্য বিবেকানন্দ তার গুরুর শ্রদ্ধার্ঘ্য রূপে বানিয়েছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা জানানো এবং মনুষত্ব ধর্মের প্রচার করা। তাই মন্দিরটিতে লক্ষ্য করা যায় নানান জায়গার, নানান ধর্মের নানান জাতির মানুষের স্থাপত্যের নিদর্শন। যেমন মূল মন্দিরের স্তুপ আকৃতি চূড়া ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের নিদর্শন, আবার মেঝে তৈরিতে রয়েছে খ্রিস্টানদের নিয়মের ছোঁয়া আবার জানালা দরজা পাওয়া যায় মুঘল যুগের স্থাপত্য নিদর্শন আবার ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় গ্রীক স্থাপত্যের পিলার আমার বাইরে দেওয়ালের কাজ অজন্তা স্থাপত্যের নেয়, সবমিলিয়ে মূল মন্দিরটির থেকে নজর ফেরানো যায় না।
মঠের পরিবেশ যেমন শান্ত তার থেকেও বেশি শান্তি পাওয়া যায় মন্দিরের ভেতরে। পদ্দের উপর বসে রয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ সবাইকে দেখছেন। তার দিকে তাকিয়ে নিজের দোষ গুণ ত্রুটি ভুলে নিজেকে বিলীন করে দেওয়া যায়। অসম্ভব সুন্দরী এই জায়গাটি সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে গঙ্গার বাঁধানো ঘাট, অন্যান্য মন্দির ও সুসজ্জিত বাগান। প্রতিদিন এখানে ভোগ বিতরণ করা হয়। আগে থেকতি। কুপন কেটে খাওয়ার খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।
• কিভাবে যাব ?
হাওড়া থেকে বাসে করে আপনি বেলুর মঠে পৌঁছে যেতে পারবেন। এছাড়াও আপনি দক্ষিনেশ্বর থেকে নৌকো করে এখানে যেতে পারবেন।
• মন্দির খোলার সময় ?
মন্দিরটি খোলা থাকে সকাল ৬:৩০ থেকে দুপুর ১২ টা আবার বিকেল ৩:৩০ থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত।
ভালো লাগলে পোস্টটি সকলের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন । আপনাদের মতামত নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানান আমরা অপেক্ষায় আছি ।
নিচের ভিডিওটি দেখুন