এই গরমে ঘুরতে যাবার জন্য উত্তর পূর্ব ভারতের কিছু আদর্শ জায়গায় তালিকা – Best Places to Visit in North East ndia
2 years ago bongcuriosity@gmail.comবন্ধুরা, কেমন আছেন? চলে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আজ নতুন সফর নিয়ে। আজ আপনারা এমন সকল জায়গার সফর সঙ্গী হবেন, যেখানকার নাম শুনলে এই গরমেও আপনার মন প্রাণ ফুরফুরে হয়ে উঠবে। শঙ্খ শুভ্র তুষারের রাজ্যে পাড়ি দিতে, আপনার মন তড়িঘড়ি উদ্যত হবে।
আজ আমরা আপনাদের উত্তর পূর্ব ভারতের ( North East India) সফর সঙ্গী করে তুলবো।
• গ্যাংটক, সিকিম –
শিয়ালদা স্টেশন থেকে দার্জিলিং মেল বা জনশতাবদী এক্সপ্রেস করে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে, সেখান থেকেই গাড়ি বা বাসে আপনি আপনার সফরের সূচনা করতে পারেন। এপ্রিল মে মাস হল আদর্শ সময় সিকিম যাওয়ার। কারণ এই সময় পশ্চিমবঙ্গবাসী গরমে নাজেহাল হন। তাই এই সময় ইচ্ছে হয়েই, ঠান্ডার রাজ্যে গিয়ে আরাম বিলাস করবার। সিকিমের অনেকগুলি ভাগ আছে। জনপ্রিয় জায়গা বলতে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক।
জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি ভাড়া করে খুব সহজেই গ্যাংটক পৌঁছে যাবেন। গ্যাংটক ভ্রমণের তালিকায় প্রথমেই রাখতে পারেন, বাকথাং জলপ্রপাত । এই জলপ্রপাতটি গ্যাংটকের মূল সড়কের কাছেই অবস্থিত । প্রাকৃতিক ভাবে নির্মিত জলপ্রপাতের সৌন্দর্য, আপনার মনকে শান্তি দেবে। এছাড়াও, সিকিমের অন্যতম আকর্ষণ গুরুদংমার লেকটিও তালিকার অন্তর্ভুক্ত রাখুন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭,০০৪ ফিট উচ্চতায় এই লেক অবস্থান করছে। চারিদিকের অমল ধবল পাহাড়ের মাঝে এই লেকের অবস্থান, ঠিক যেন কোন এক রূপকথার রাজকন্যা, যাঁকে ঘিরে রয়েছে তাঁর দেহরক্ষীরা। এই দৃশ্য চোখের আরামের সঙ্গে মনের আনন্দ ও দিতে বাধ্য। পাহাড়ের কর্ত্রী, কাঞ্চনজঙ্ঘার সুদর্শন রূপটির দেখা পেতে পারেন গ্যাংটক ন্যাশনাল পার্কটি থেকে, যেটি ইউনেস্কো পরিচালিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিচিত। গ্যাংটক থেকে একদিনের গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন, বরফের স্বর্গ রাজ্য নাথুলা পাস থেকে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪১৪০ ফুট উঁচুতে অবস্থান করছে। বেশিরভাগ সময়েই এখানে বরফের আনাগোনা থেকেই। ভারত এবং চীনের সীমান্তে অবস্থানের জন্য আগে থেকে এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। সিকিমের সিল্ক রুট বা রেশম পথও একটি দর্শনীয় স্থান। আরিটার থেকে সিল্ক রুট ধরে একদিন সাইট সিইং হিসেবে রাখতে পারেন, যার মধ্যে পড়বে বিখ্যাত শহীদ বাবা মন্দির সহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। সিল্ক রুটের আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ি ছুটে চলার মজা উপভোগ, জীবনে খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। এছাড়াও পেলিং, লাচুং, ছাঙ্গু সাইটসিয়িং হিসেবে বা একদিন থাকার পক্ষে যথেষ্ট। সিকিমের নর্থ, সাউথ, ইস্ট, ওয়েস্টেরও ভাগ আছে, যেখানে বছরের যেকোনো সময়ই একটি টুর গাইড তৈরি করে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে পাবেন হোম স্টের সুব্যবস্থা সহ প্রচুর অফবিট জায়গা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
• গৌহাটি, অসাম –
উত্তর পূর্ব ভারতের ( North East India) অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আসাম। হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে বা কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা পৌঁছে জন গৌহাটি। গৌহাটির মূল আকর্ষণ কামাখ্যা মন্দির। দেবী পার্বতীর যোনি পড়েছিল এই অঞ্চলে। সারা মাসব্যাপী অগণিত ভক্তের সমাগম হয় এই স্থান জুড়ে। এছাড়াও ২০০ বছরের পুরনো জলাশয় শিবসাগরও আসামের দর্শনীয় স্থান। ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ মাজুলি, বিচিত্র বণ্য প্রাণীর বিপুল বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও মানস অভয়ারণ্যে আপনি এক রাত থেকে জঙ্গল সাফারির সঙ্গে বন্য পরিবেশ ও উপভোগ করতে পারবেন।
• শিলং, মেঘালয় –
আসামের সঙ্গে যোগ করতে পারেন মেঘালয়কেও। মেঘালয়ের শিলং হল একটি মন ভালো করা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে দেখার মত অনেক কিছু পাবেন। শিলংয়ের দ্বিস্তরীয় জলপ্রপাত এলিফ্যান্ট ফলস থেকে শুরু করে লিভিং রুট ব্রিজ, উমিয়াম লেক, স্বচ্ছ ডাউকি নদী আপনার সফরকে আনন্দকদায়ক করে তুলবে। এছাড়াও শিলং ভিউ পয়েন্ট থেকে আপনি সমগ্র শহরের আমেজ গ্রহণ করতে পারবেন। ১০৩৩ ফুট উঁচু সাতটি খন্ডযুক্ত জলপ্রপাত, সেভেন সিস্টার্স ফলস আপনাকে বিস্মিত করবে বৈকি। এছাড়া এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম মলিংলং এও ঘুরে আসতে পারেন সপরিবারে। চির বৃষ্টিস্নাত চেরাপুঞ্জিও রাখবেন আপনার সফরনামায়।
• জিরো ভ্যালি ,অরুণাচল প্রদেশ –
অরুণাচল প্রদেশ উত্তর পূর্ব ভারতের ( North East India) এক অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। গরমকালে যাওয়ার জন্য এই জায়গা বেশ উপযুক্ত। এপ্রিল বা মে মাস আপনি নির্বাচন করতে পারেন অরুণাচল সফরের জন্য। ট্রেন বা প্লেন যেকোনো উপায়েই এই জায়গায় পৌঁছনো যায়। তেজপুর বিমানবন্দর বা রাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনে নেমে, সেখান থেকে সড়কপথে শুরু করতে পারেন আপনার যাত্রা।
অরুণাচলের জিরো ভ্যালি পৃথিবী বিখ্যাত। নাম শুনে কখনোই ভেবে বসবেন না, জায়গাটির সত্যতা নিয়ে! আসলে নাম শূন্যের মত শোনালেও, এই জায়গার প্রাকৃতিক পরিপূর্ণতা আপনাকে তৃপ্তিতে ভরিয়ে রাখবে। হিমালয়ের পাদদেশে সংলগ্ন এই উপত্যকা আপাতানি উপজাতির বসবাসের কেন্দ্র। এই উপজাতির নারীদের সৌন্দর্য্যও আপনাকে মোহিত করে তুলবে। বলা হয়, অন্যান্য অরুণাচলের উপজাতিদের তুলনায়, এই উপজাতির নারীরাই নাকি বেশি সুন্দরী। এছাড়াও তাওয়াং লেক, তাওয়াং গুমফা, ইন্দো চায়না বর্ডার, যশওয়ানত গড়, তাওয়াং ওয়ার মেমোরিয়াল, তাওয়াং ক্রাফট সেন্টার, ব্রহ্মা-দুং-চুং, অনি গোমপা, উর্গেলিং গোমপা, অতুলনীয় সৌন্দর্যের আবেশে পূর্ন পাঙ্গাতেনগ সো লেক বা বাপ টেং কাঙ এবং নুরানাঙ জলপ্রপাতের শোভাও আপনাকে প্রশান্তি দেবে। অরুণাচলের অন্যতম বড় আকর্ষণ হল ‘মাধুরী লেক’। হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন নামটা, অনেকেই নয়। তাঁদের জন্য বলি, এই অঞ্চলে সঙ্গেতসার নামের একটি লেক ছিল, ১৯৯৭ সালে বিখ্যাত বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত কোয়লা ছবির শুটিংয়ে আসেন এই স্থানে। এই অঞ্চলের মানুষ মাধুরীকে সম্মান জানাতে, তাঁর নামেই লেকটির নাম দিয়ে দেন ‘মাধুরী লেক’।
• কোহীমা, নাগাল্যান্ড –
আকাশপথে বা রেলপথে নাগাল্যান্ড পৌঁছনো যায়। নাগল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাগাল্যান্ডের এয়ারপোর্ট ডিমাপুর। এখান থেকে যেকোনো যানে করে আপনি পরিভ্রমণ করতে পারবেন এই রাজ্যের। ইদানিং কালে নাগাল্যান্ডের জুকু ভ্যালি ট্রেক নিয়ে পর্যটক মহল বেশ সরগরম। এই ট্রেক অন্যান্য ট্রেকের তুলনায় বেশ সহজ। মনোরম সবুজস্নাত পাহাড়ি প্রকৃতির কোলে দুদিন কাটালেই আগামী দিনের জন্য আপনার শরীর কিংবা মন ভরপুর এনার্জি পেয়ে যাবে। মনে রাখবেন বন্ধুরা, ইনার লাইন পারমিটের ব্যবস্থা করিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও ফাকিম বা ইন্টাকি অভয়ারণ্য হোক বা ছোট্ট ছবির মত শহর তুলি, নাগাল্যান্ডের প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে আপনি একবার একাত্ম হয়ে গেলে ছেড়ে আসতে মন বিষণ্ণ হয়ে উঠবে। সবুজের গালিচা মোড়া যুকৌ উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৩৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। রাজধানী কোহীমা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের এই স্বর্গ রাজ্য, বিপুল প্রজাতির পাখিদের বাসস্থান। সঙ্গে রয়েছে নানান গোত্রের গাছ। ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য যা এক জীবনদায়ী আনন্দ দান করবে।
• ইম্ফল, মনিপুর –
ইম্ফল বিমানবন্দরে অবতরণ করে, অথবা দিমাপুর বা গৌহাটি হয়ে মোদপুর রেলস্টেশনে নেমে আপনার নাগাল্যান্ড সফরের সূচনা করতে পারেন। সবুজে ঘেরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৯০ মিটার উঁচুতে, একটি হৃদয়াকৃতির উপত্যকা বিশিষ্ট স্থান হল ইম্ফল। এটিই মণিপুরের রাজধানী। সারাবছর অঢেল পরিমাণে জনসমাগম ঘটে এই রাজ্যে। ইম্ফল নদীর পাড়ে কাংলা গড় বিশেষ প্রসিদ্ধ স্থান। এছাড়া হিয়ানথাং লাইরেম্বি মন্দির অঞ্চলে কয়েকটি পুরানো মন্দির দেখতে পাওয়া যাবে, যেখানে প্রতি বছর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাই বাঙালিদের জন্য দুর্গাপুজোর মরশুমে এই অঞ্চলে যাওয়া বিশেষ লাভের। এছাড়াও মহিলাদের দ্বারা পরিচালনা করা ইমা কেইথেল ইম্ফলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র। ভারত শান্তি স্মৃতি সৌধ, ইম্ফল যুদ্ধ কবরস্থান আপনি আপনার পছন্দ মত আপনার তালিকায় রাখতে পারেন, কারণ এমন জায়গা স্মৃতি বহন করে ঠিকই, কিন্তু ঘুরতে গিয়ে মন বিষাদে ভরিয়েও তোলে।
তো বন্ধুরা, আজ আমাদের উত্তর পূর্ব ভারত (North East India) সফর এই পর্যন্তই। কেমন লাগলো আপনাদের অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না। আরোও কোন কোন জায়গা সম্পর্কে জানতে চান জানাবেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। আজকের জন্য এইটুকুই, দেখা হবে আগামী সফরে।