‘বাঙালি’ মানেই ‘ভোজনরসিক’ আর বাঙালির প্রাণের শহর কলকাতার খাবার, প্রসিদ্ধ হবে না তা কী কখনও সম্ভব? সমগ্র পৃথিবীর কাছে বাঙালির হল খাদ্য রসিক । তাই বাঙালির প্রানের শহরে অনেক ঐতিহ্যশালী ,বাঙালি , চাইনিস সব ধারণের রেস্তোরা আমরা দেখতে পাই। রেস্তোরাঁ মানে শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে বহু স্মৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস। পুরনো রেস্তোরাঁগুলি শহরের বহু ইতিহাসের সাক্ষী। কলকাতার সেরকমই ঐতিহ্যবাহী তিন রেস্তোরাঁকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দিল ইন্ডিয়ান ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (Indian Trust For art and Culture)।
শহরের পার্ক স্ট্রিট (Park Street) এলাকার মোকাম্বো (Mocambo), কোয়ালিটি (Kwality) এবং ট্রিনকাস (Trincas) রেস্তোরাঁকে হেরিটেজের সম্মান দেওয়া হয়েছে। এই রেস্তোরাঁ গুলি কলকাতার খাদ্য সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই এই সম্মান।
কমপক্ষে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই রেস্তোরাঁ গুলি শহরের চেতনা ও সংস্কৃতির প্রতীক। এবার থেকে এই রেস্তোরাঁগুলির প্রবেশদ্বারে থাকবে বিশেষ ফলক। কলকাতার মোট ১৬ টি রেস্তোরাঁকে ২০১৯ সালেই হেরিটেজ সম্মানে ভূষিত করেছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রকোপে এই তিনটি রেস্তোরাঁয় “ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন” এর এই ফলকটি লাগানো সম্ভবপর হয়নি।
আসুন আজ আমরা জেনেনি এই ৬০ বছরের বেশি পুরনো রেস্তোরাঁ গুলির সমন্ধে ।
ট্রিনকাস (Trincas) : ১৯৩৯-এ সুইস কর্তা ট্রিঙ্কা সাহেবের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ট্রিঙ্কাস রেস্টুরেন্ট, প্রাথমিকভাবে একটি বেকারি ছিল যেখানে কেক, পেস্ট্রি, কফি, চা পরিবেশন করা হত। কিন্তু ১৯৬০ সালে কলকাতার বাসিন্দা ওম প্রকাশ পুরী এবং এলিশ জশুয়া এখানকার মালিকানা গ্রহন করেন এবং এই বেকারিকে রেস্টুরেন্টে রূপান্তরিত করেন। বর্তমানে এই রেস্টুরেন্টটি পুরী পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম পরিচালনা করেন। এই রেস্তোরাঁর খাবারের পদ কমবেশি অপরিবর্তিত রয়েছে। এই রেস্টুরেন্টে টলিউড ও বলিউড এর অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত সেলিব্রিটি এসে এখানকার খাবার খেয়ে গেছেন। এই রেস্টুরেন্টটি মুলত Multicuisine North Indian, Chinese এবং Continental Food এর জন্য জনপ্রিয়।
- দুজনের খরচ প্রায় ২০০০ টাকা।
- এই রেস্টুরেন্টটি সকাল ১১ টা থেকে ১০ঃ৩০ পর্যন্ত সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা থাকে।
- Address: 17, Park St, near Oxford Book Store, Park Street area, Kolkata, West Bengal 700016
মোকম্বো (Mocambo) : ১৯৫৬ সালে শিবাজি কোঠারির দ্বারা মোকাম্ব নামের এই রেস্তুরেন্টটি Music এবং Dance এবং Floor সহ একটি Night Club হিসেবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু ৭০ দশকের গোড়ার দিকে State Government Nightclub গুলির উপর Steep Tax আরোপ করায় এখানে Music বন্ধ হয়ে যায় এবং Dance Floor টিকে বসার জায়গায় রুপান্তরিত করা হয়। এই রেস্টুরেন্টটি ইটালিয়ান সেফ দ্বারা ডিজাইন করা নতুন ধরনের মেনু -র জন্য সুপরিচিত। এখানকার মেনু ও অন্দরসজ্জা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখানে আপনি জার্মান স্থপতি মেসারসমিড কাজ দেখতে পাবেন।এখানকার বিখ্যাত খাবারগুলির নাম ‘H’ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যার অর্থ হেরিটেজ এবং এই খাবারগুলি ১৯৫৬ সাল থেকে এখানকার মেনুতে রয়েছে। এখানে গেলে আপনারা অবশ্য একবার খেয়ে দেখতে পারেন Beefsteak, Prawn Cocktail, Asparagus on Toast, Fshsteak।
- দুজনের খরচ প্রায় ২০০০ টাকা।
- এই রেস্টুরেন্টটি সকাল ১১ঃ১৫ থেকে ১১ঃ১৫ পর্যন্ত সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা থাকে।
- Address: Ground Floor, 25B, Mirza Ghalib St, Taltala, Kolkata, West Bengal 700016
কোয়ালিটি (Kwality) : ১৯৫২ সালে প্রেমানাথ গাই এই রেস্টুরেন্টটি চালু করেন। প্রাথমিকভাবে এই রেস্টুরেন্টটি একটি Tea Room এবং Icecream Parlour হিসেবে চালু হয়েছিল। বর্তমানে এই রেস্টুরেন্টটি Indian Continental Dish-এর জন্য খুবই বিখ্যাত। পার্কস্ট্রিট এলাকার পর এই রেস্টুরেন্টটির আর একটি Branch খোলা হয়েছে বালিগঞ্জ-এ। এখানে খাবারের মধ্যে আপনারা চেখে দেখতে পারেন মটন সিক কাবাব, Fish মশালা কাবাব, পিণ্ডি চানা, চিকেন ভর্তা, টমেটো ফিস, গ্রিল ফিস এবং dessert- এ Tutti Frutti।
- দুজনের খরচ প্রায় ১৫০০ টাকা।
- এই রেস্টুরেন্টটি সকাল ১২ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা থাকে।
- Address:
I. 17, Park St, Taltala, Kolkata, West Bengal 700016
II. 2, Ashutosh Chowdary Avenue, Dover Terrace, Ballygunge, Kolkata, West Bengal 700019
কলকাতার সেরা কিছু বাঙালি রান্নার রেস্তোরা
এই আর কিছু রেস্তোরাঁকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার কথা চলছে সেগুলি হল – ইউ চু, কে সি দাশ থেকে আরও উত্তরে সাবির, ভীম নাগ, প্যারামাউন্ট, কফিহাউস, দিলখুসা, নকুড়, নিরঞ্জন আগার, অ্যালেন কিচেন ও মল্লিকবাজারের সিরাজও আছে তালিকায়। তাহলে আর কিছু দিনের মধ্যাই এই রেস্তোরাঁ গুলির বাইরে “ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন” এর ফলকটি দেখতে পাব।